সেন্টমার্টিনে বিকল্প পথে যাবে পণ্যবাহী ট্রলার

কক্সবাজার প্রতিনিধি :

দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরিন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে টেকনাফ – সেন্টমার্টিন নৌরুটে। ফলে গত ৭ দিন ধরে বন্ধ ছিল সেন্টমার্টিনে পণ্যবাহী ট্রলার বা বোট চলাচল । এতে দ্বীপে সৃষ্টি হয়েছে খাবার ও ঔষধের তিনি তীব্র সংকট। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) থেকে বিকল্প পথে কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে ট্রলার যোগে পণ্য যাবে সেন্টমার্টিন।

এছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে নতুন চ্যানেলে কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় সীমিত সংখ্যক যাত্রী আসা-যাওয়া করবে।

বুধবার (১২ জুন) বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

মিয়ানমারের একের পর এক গুলিবর্ষণের ঘটনায় টানা ৭ দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে বন্ধ রয়েছে সার্ভিস ট্রলারসহ নৌযান চলাচল। যার কারণে কোনোভাবেই টেকনাফ থেকে পাঠানো যাচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। একই সঙ্গে অসুস্থ অনেক রোগীকে সেন্টমার্টিন থেকে পাঠানো যাচ্ছে না টেকনাফে।

এ কারণেই বিকল্প পথ কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে ট্রলারে করে সেন্টমার্টিনে পণ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরাও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে নতুন চ্যানেলে আসা-যাওয়া করতে পারবে।

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এখনে বন্দি হয়ে আছেন ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দা। মিয়ানমারের একের পর এক গুলিবর্ষণের ঘটনায় যেতে পারছেন না কোথাও। দ্বীপের পাড়ে নোঙর করা রয়েছে ট্রলার ও স্পিড বোট। অনেকটাই মাঝ সাগরে দ্বীপে বন্দিদশায় দিন পার করছেন বাসিন্দারা। ফুরিয়ে আসছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, নাফ নদী যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে, সেই নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থানরত সশস্ত্র দলটি মঙ্গলবার সকালে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে যাওয়া স্পিডবোটে ১০-১২ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। চালক অবস্থা বুঝে স্পিডবোট দ্রুত চালিয়ে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে যান। এতে কেউ হতাহত হয়নি। বোটটি দুপুর ১২টার দিকে দ্বীপে পৌঁছে যায়।

ট্রলার বা স্পিডবোটের মাধ্যমে ওই রুটে যাত্রী বা পণ্য পরিবহনের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি। এরপর ৮ জুনও আরেকটি পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলি চালানো হয়। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি।

স্পিডবোট অনেক দূর থেকে চলাচল করলেও কেন বাংলাদেশের জলসীমায় এসে তারা গুলি করছে তা বোঝা যাচ্ছে না।

গেলো ৭ দিন ধরে বন্ধ টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ। তাই দ্বীপে শেষ হয়ে আসছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। আর যা খাদ্যপণ্য আছে তা দিয়ে কতদিন যাবে সেটি নিয়েও রয়েছেন চরম শঙ্কায়। এরইমধ্যে দ্বীপের অনেকেই অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন। বন্ধ রয়েছে দ্বীপের দোকানপাট।

দ্বীপের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সামনে কোরবানির ঈদ। কিন্তু দ্বীপের বাসিন্দাদের ঘরে এখনও কিছুই কেনা হয়নি। বরং ঘরে যা ছিল চাল থেকে শুরু করে তেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সবকিছুই শেষ হয়ে আসছে। এখন কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।

আরেক বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি করছি, দ্রুত আমাদের যাতে টেকনাফ কিংবা কক্সবাজারে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। কিন্তু যদি যাতায়াতের ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে দ্বীপের বাসিন্দাদের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। দ্বীপের অনেক বাসিন্দা অসুস্থ। কিন্তু চিকিৎসার জন্য যেতে পারছেন না টেকনাফে। এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে ওষুধ সংকটও।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি চালানোর কারণে ৭দিন ধরে এ নৌপথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বঙ্গোপসাগর হয়ে শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার বিকল্প পথ নিয়ে গত রোববার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, এখন সেন্টমার্টিনে পণ্য পাঠানোর জন্য বঙ্গোপসাগরই ভরসা। আশা করি, কক্সবাজার দিয়ে দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বীপের বাসিন্দাদের যাতায়াত এবং খাদ্যসামগ্রী পাঠানো ব্যবস্থা করা হবে।