রামুতে অস্থিত্বের লড়াইয়ে কাজল-ভূট্টো

সোয়েব সাঈদ, রামু :

রামুতে প্রচার-প্রচারনা ও গণসংযোগ শেষ। রাত পোহালেই কাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। কার মুখে থাকবে জয়ের হাসি, কার গলায় উঠবে জয়ের মালা। তা নিয়ে উৎসুক রামু’র মানুষের ভাবনার শেষ নাই।

এ নির্বাচনে অস্থিত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর বড় ছেলে সোহেল সরওয়ার কাজল। তিনি পরাজিত হলে ওসমান পরিবারের একটি নক্ষত্রের পতন হবে। অপরদিকে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো। তাই এ নির্বাচনে হেরে গেলে আম-ছালা দুটোই হারাবেন সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো।

এ নিয়ে পুরো রামুবাসীর মাঝে বিরাজ করছে অন্যরকম উত্তেজনা। জনসাধারণ ও ভোটারদের সব জল্পনা কল্পনার অবসান হবে কাল বুধবার ২৯ মে।

ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। উপজেলার এগার ইউনিয়নের ৬৪ ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ নিশ্চিত রাখতে সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে এগারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে ভোটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য বিজেপি, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে কোনো প্রকার ভীতি মধ্যে না থাকে সে বিষয়েও সজাগ রয়েছে প্রশাসন। জানালেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম।

উপজেলা নির্বাচন অফিস জানায়, রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৯ হাজার ১২৫ এবং মহিলা ভোটার ৮৭ হাজার ৮২৬ জন। উপজেলার এগার ইউনিয়নে ৬৪টি ভোট কেন্দ্রের ৪৩৪টি ভোট কক্ষে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা। প্রথমবার রামু উপজেলার ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেবেন, এ নিয়েও বেশ উজ্জীবিত ভোটাররা। যদিও অনেকের মধ্যে ইভিএমে নির্বাচন নিয়ে রয়েছে ভিন্ন মতামত।

গতকাল সোমবার রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীরা গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে প্রচার-প্রচারনা শেষ করেছেন। আগামীকাল বুধবার ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান । রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই জননেতা । সোহেল সরওয়ার কাজল ও সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো। দুই জনই একই ইউনিয়নের সাবেক জনপ্রতিনিধি। মো. ইউসুফ ইকবাল নামে আরও একজনের নাম প্রতিদ্বন্দ্বী তালিকায় রয়েছে। ভোটাররা তাকে ডামি প্রার্থী মনে করছেন। ব্যালট পেপারে তার প্রতীকও থাকছে।

তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে সোহেল সরওয়ার কাজল, ‘মোটর সাইকেল’ প্রতীক নিয়ে সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো, ‘মুকুট’ প্রতীক নিয়ে মোহাম্মাদ ইউসুফ ইকবাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ‘তালা’, মোস্তাক আহমদ ‘টিউবওয়েল’, মো. আবদুল্লাহ সিকদার ‘চশমা’, মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন ‘উড়োজাহাজ’, কায়সার কামাল চৌধুরী শিমুল ‘মাইক’ প্রতীক এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আফসনা জেসমিন পপি ‘কলস’ প্রতীক ও মুসরাত জাহান মুন্নী ‘প্রজাপতি’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। কার কত সম্পদ। সমাজে বা ব্যক্তির কাছে কার গ্রহণ যোগ্যতা বেশী, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কে বেশী সহায়তা দিয়েছেন, সম্পদে ও আর্থিক গ্রহণযোগ্যতায় কে অগ্রগণ্য তা জানারও প্রবল আগ্রহ ভোটারদের কাছে। গ্রামীন সাধারণ মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে নাগরিকের কাছাকাছি থাকার শিক্ষাকে বড় করে দেখছেন। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ মুহূর্তে বা দূর্যোগ সময়ে পাশে দাঁড়িয়ে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছিলেন কোন প্রার্থী। তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন ভোটাররা।

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় প্রত্যেক প্রার্থী তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহেল সরওয়ার কাজল তার বার্ষিক আয় ৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, এর মধ্যে ৮১ হাজার টাকা কৃষিখাত থেকে, ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে এবং বাকি ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা থেকে প্রাপ্ত আয়। অপরদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ৫৪ লাখ ১ হাজার ৯৮ টাকা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, এর মধ্যে কৃষিখাতে ২৮ হাজার টাকা, ব্যবসা খাতে আয় ২১ লাখ ১৪ হাজার ৭১৩ টাকা ও ব্যাংক সুদ থেকে আয় ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮৫ টাকা এবং ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সোহেল সরওয়ার কাজল রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ২০০৩ সালে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ২০০৯ ও ২০১৯ সালে দুইবার রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো ২০১১ ও ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন সোহেল সরওয়ার কাজল। সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো এবারে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্যে গত ২৯ এপ্রিল ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

সোহেল সরওয়ার কাজল জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের বড় ভাই। অপরদিকে সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা বিহীন আরেক প্রার্থী মোহাম্মাদ ইউসুফ ইকবাল। পেশায় আইনজীবী মোহাম্মাদ ইউসুফ ইকবাল উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো’র ছোট ভাই।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. সালাহ উদ্দিন রামু উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান । তিনি রামু উপজেলা ছাত্রলীগ ও উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি। মোস্তাক আহমদ রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে দীর্ঘ ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। মোস্তাক আহম্মদ চাকমারকুল ইউনিয়ন বিএনপির ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

মো. আবদুল্লাহ সিকদার পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কাইছার কামাল চৌধুরী শিমুল পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও আইনজীবী। তিনি রামু উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি। নেজাম উদ্দিন কক্সবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ‘বাপা’র কক্সবাজার জেলা সহ-সভাপতি।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মুসরাত জাহান মুন্নী রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক মহিলা সম্পাদক। আফসানা জেসমিন পপি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। মুসরাত জাহান মুন্নীও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে ছিলেন।