মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা, উখিয়া::
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা নির্বাচনে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) সদস্যদের ডিউটি দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা আনসার ও ভিডিপির কর্মরত দলনেতাদের দিয়ে সিন্ডিকেট করে সাধারণ আনসার সদস্যদের কাছ থেকে কয়েক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশিক্ষক ও উপজেলা আনসার বিডিপির কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে।
আগামী ২৯ মে উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপজেলার ৬২টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন জন্য ৬২টি প্লাটুন নির্ধারণ করা হয়েছে৷ প্রতিটি প্লাটুনে ১৩ থেকে ১৫ জন সদস্য৷ ৬২টি প্লাটুনে মোট ৮৩০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন৷ এই সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে যাচাই-বাছাই শেষে আনসার সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হয়। এর আগে নেওয়া হয় ঘুষ। গতকাল রোববার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বেশকয়েকজন আনসার সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ঘুষ নেওয়া বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যায়। এই সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে যাঁরা ডিউটি করবেন তাঁদের অধিকাংশ সদস্যকে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি প্লাটুন থেকে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ্য করেন, এসব টাকা প্লাটুন প্রধান থেকে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ ও সরাসরি ক্যাশ টাকা সংগ্রহ করছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আনসার (গার্ড) হিসেবে দায়িত্বরত নজরুল ইসলাম৷ তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি মাঝেমধ্যে অফিস যায় অফিস পরিষ্কার করার জন্য এবং স্যারকে সহযোগিতা করার জন্য৷ বিকাশে টাকার নেওয়ার বিষয়ে অশিখার করেন এবং তিনি দাবি করেন আমি কোনো অনিয়মের সাথে সম্পর্ক নেই বলে মোবাইল কেটে দেন৷
আনসার সদস্যদের সূত্র বলছে, উখিয়া আনসার বিডিপি একজন সাবেক কমান্ডারের কাছে জিম্মি, আমার থেকে ঘুষ নিয়ে তাকেও ভাগ দিতে হয়৷ তিনি এখন আনসার বিডিপিতে না থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক কমান্ডার। তিনি সব আনসার সদস্যদের বাধ্য করেন ঘুষ দেওয়ার জন্য৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনসারের এক প্লাটুন কমান্ডার বলেন, আমি একটি প্লাটুন দিতে ঘুষ হিসেবে ৮ হাজার টাকা দিতে হয়েছে৷ আমি এমন ঘুষ দিয়ে আর কোনো সময় আনসারের ডিউটি নিয় নাই৷ অফিস খরচ বলে টাকাগুলো সংগ্রহ করছেন।
আনসার সদস্য (গার্ড) নজরুল ইসলামের একটি কল রেকর্ড বলতে শুনা যাচ্ছে, “অন্যান্য কমান্ডার রুকিয়া ম্যাডাম ৬ হাজার টাকা দিয়েছে, ৫ হাজার টাকা নই তুমি যতটুকু পার ব্যবস্থ করে দাও কারণ আগামীকাল কক্সবাজার চলে যাবো ফাইনাল লিস্ট করতে৷”
এদিকে বিষয়টি উপজেলা প্রশিক্ষক ও উপজেলা আনসার বিডিপির কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুদ্দিন জানান, উখিয়া উপজেলায় ৬২টি প্লাটুনের মধ্যে ৮৩০ জন আনসার সদস্য নেওয়া হয়েছে৷
প্লাটুন থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন আমি ব্যস্ত আছি, জসিম উদ্দিন চৌধুরী উস্তাদ আছে, উনি ডাক দিলে সন্ধ্যায় এসে কথা বলিয়েন৷ ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে আমি জানি না বলে ফোন কেটে দেন৷
কক্সবাজার আনসার ও ভিডিপি জেলা কমান্ড্যান্ট অম্লান জ্যোতি নাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উখিয়া উপজেলায় দুদিন পরিক্ষা নেওয়ার পরে আনসার সদস্যদের নেওয়া হয়েছে, যদি কেউ টাকা নেয় তাহলে আমাকে ফোন করতে বলবেন। যে বাছাইয়ের দিন উপস্থিত থাকবে তাকে ডিউটি দিতে বাধ্য৷ ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যান৷
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-