কক্সবাজার জার্নাল রিপোর্ট :
উখিয়া উপজেলার ব্যস্ততম স্টেশন কোর্টবাজারে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শতাধিক অবৈধ টমটম। এসব অবৈধ টমটমের লাইসেন্স বা ফিটনেস না থাকলেও টোকেন থাকা যেনো বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুসন্ধানে উঠে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কোর্টবাজার স্টেশন ঘিরে সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ টমটম। অদক্ষ চালক দ্বারা এসব টমটমে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে যাত্রীরা। এছাড়াও কোর্টবাজার কাঁচাবাজারের সামনে সড়কের উপর পার্কিং স্থাপন করে সাধারণ মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেখা যায় অর্ধশতাধিক ইজিবাইক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রত্নাপালং তেলীপাড়া সমিতির আওতাধীন ৭০টি টমটম ও মিনি টমটম প্রতিদিন পার্কিংয়ে অবস্থান করে। প্রতিটি টোকেনের পেছনে চালকদের গুনতে হয় দেড়শত থেকে দুইশত টাকা পর্যন্ত। টোকেন না নিলে পড়তে হয় ট্রাফিক পুলিশ কিংবা হাইওয়ে পুলিশের রোষানলে। কোনো চালক টোকেন না নিলে সমিতির পক্ষ থেকে পার্কিংয়ে না আসার জন্য বলা হয় বলে জানায় চালকরা। একইভাবে কোর্টবাজার ভালুকিয়া সড়কেও অর্ধশতাধিক ইজিবাইক অবৈধভাবে টোকেন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায়।
কোর্টবাজার-সোনারপাড়া সড়কের চৌরাস্তার মোড়ে অবস্থিত রুমখাঁ মনির মার্কেটের পার্কিং, পাইন্যাশিয়া পার্কিং,লম্বরীপাড়া পার্কিং ও সোনারপাড়া পার্কিংয়ের টমটম ও মিনি টমটম চলাচল করে টোকেন নিয়ে। টমটমের প্রতি টোকেনে নেওয়া হয় দেড়শত টাকা করে। টোকেন না নিলে পড়তে হয় পুলিশের রোষানলে। তাই,টোকেন-ই লাইসেন্স মনে করেন চালকরা।
এদিকে, কোর্টবাজার স্টেশনের যানজটের অন্য কারণ সড়কের উপর যত্রতত্র পার্কিং স্থাপন।
উপজেলা প্রশাসন ও উখিয়া থানা পুলিশের টিম কয়েক দফায় মূল সড়ক থেকে ১০০ গজ দূরে পার্কিং স্থাপনের নির্দেশ দিলেও তা অমান্য করে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় এসব টমটম। অন্যদিকে, চলমান বিদ্যুৎ বিভাগের চরম পরিস্থিতিতেও সারা দিন সড়কে চলে এসব ব্যাটারিচালিত যান। ফলে রাতে বিদ্যুতের বড় ঘটতি দেখা দেয়। এভাবে ইজিবাইকের পেছনে প্রতিদিন বিদ্যুতের অপচয় বাড়ছে। ইজিবাইকের দাপটে পায়ে চালিত রিকশা উধাও। সড়কে অননুমোদিত বলে এর কোনো পরিসংখ্যান নেই সরকারি দপ্তরে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাটারি রিকশার একটা বড় অংশে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় অবৈধ সংযোগ থেকে। ফলে সাধারণ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হয় । উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা করলেও খুব একটা সফল হচ্ছে না গ্যারাজ মালিকদের কৌশলের কারণে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে এক হাজার ১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এতে অনায়াসে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা চালানা যায়। এছাড়াও প্রায় গ্যারেজে চুরি করে ও লুকিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ব্যাটারি রিচার্জ করায় সরকার বিদ্যুতের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়াও উপজেলা প্রশাসন বা ট্রাফিক বিভাগের কাছে ইজিবাইক কিংবা অটোরিকশার কোনো পরিসংখ্যান নেই।
জানা গেছে, উপজেলার যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠা প্রায় গ্যারেজেই লুকিয়ে এসব অটো বাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। অনেক স্থানে চলছে মিটার টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে ইজিবাইক আমদানি বন্ধ ও পুরনোগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি গত কয়েক বছরেও। এমনকি সড়কগুলোতে এই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই রাস্তায় চলছে অটোরিকশা। আর এগুলোর বেশির ভাগ চালকই সামান্য অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক লাইন থেকে গাড়িগুলোতে চার্জ করিয়ে নিচ্ছেন। তারা এই গাড়িগুলো যে গ্যারেজে রাখছেন সে জায়গা থেকেই রাতভর একটি গাড়ির শুধু চার্জের জন্য গ্যারেজ মালিককে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে দিচ্ছেন।
বেশ কয়েকটি এলাকার অটোরিকশা গ্যারেজে ঘুরে জানা গেছে, এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অনেক বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যে কারণে গ্যারেজ মালিকরা খরচ কমিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে থাকে। তবে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার পেছনে রয়েছেন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
এদিকে সচেতন মহলের অভিযোগ, টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে যত্রতত্র পার্কিং স্থাপন করে নিজেদের পকেট ভারী করে যাচ্ছে শ্রমিক নেতারা। তদন্তপূর্বক টোকেন বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
টোকেন থাকলে যানবাহন ধরপাকর না করার বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান জানান,”টোকেন থাকলে যানবাহন না ধরার বিষয়টি সত্যতা নেই। অবৈধ যানবাহন চলাচল করলে আমরা জব্দ করে মামলা দিই।”
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-