বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন জমে উঠেছে। চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন দুজন প্রার্থী। একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান, অপরজন কক্সবাজার পৌরসভার চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার। শুরুতে পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষে তিনজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। আগামী ৮ মে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
দলের নেতা–কর্মী ও ভোটারেরা জানান, শুরুর দিকে মুজিবুর রহমানের অবস্থান ভালো ছিল। তবে গত রোববার থেকে নুরুল আবছারের পক্ষেও জোর প্রচারণা শুরু হয়েছে। তাঁর হয়ে মাঠে নেমেছেন কক্সবাজার পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমসহ অনেকে।
রোববার রাতে শহরের একটি মিলনায়তনে নুরুল আবছারের পক্ষে মতবিনিময় সভা ডাকেন মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। মাহমুদুল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টিপু সুলতানসহ পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর বক্তব্য দেন।
সভায় মেয়র মাহবুব বলেন, দুর্নীতি, দখল বাণিজ্য, লুটপাট ঠেকাতে নুরুল আবছারকে বিজয়ী করতে হবে। নুরুল আবছার যোগ্য লোক, তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবেন। রোববার বিকালে শহরের পাহাড়তলীতে গণসংযোগ করেন নুরুল আবছার। তিনি বলেন, ৮০ শতাংশ ভোটার তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।
এদিকে মুজিবুর রহমানের পক্ষে মাঠে নামেন কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলামসহ শহর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী ও পাঁচটি ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানরা।
শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম বলেন, মেয়র থাকাকালে গত পাঁচ বছরে মুজিবুর রহমান কক্সবাজার পৌরসভার যেসব উন্নয়ন করেছেন, তা গত ৫০ বছরেও কেউ করে দেখাতে পারেননি। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে পুরো উপজেলার রাস্তাঘাটসহ দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। মুজিবুর রহমান মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে ঝিলংজা ইউনিয়নের টানা ১৪ বছর ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।
রোববার বেলা তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শহরের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন মুজিবুর রহমান। এ সময় কয়েকটি পথসভায় তিনি মেয়র থাকাকালীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তালিকা তুলে ধরেন। মাদক-সন্ত্রাস, অপরাধ বন্ধের পাশাপাশি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, নুরুল আবছারের পক্ষে দলের বেশ কিছু নেতা প্রকাশ্য হলেও মুজিবুর রহমানের পক্ষেও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের অনেকে বিভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। কেউ আবার সংসদ সদস্য। তবে দলের একটি প্রভাবশালী মহল চাইছেন না মুজিবুর রহমান জিতে আসুক।
গত ২৩ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক। শহরের প্রধান সড়কে তাঁর পোস্টার ও ব্যানার সাঁটানো হয়। কিন্তু গত শনিবার তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি মুজিবুর রহমানের দুর্নীতি, লুটপাট ও ক্ষমতার দাপটের কথা তুলে ধরে তাঁকে প্রত্যাখানের অনুরোধ জানান।
মুজিব ও কায়সারুল সম্পর্কে আপন চাচাতো-জেঠাতো ভাই। কায়সারুল হকের বাবা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মোজান্মেল হক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কক্সবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। কায়সারুল হকের বড় ভাই শাহীনুল হক বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। কায়সারুল হক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় লাভবান হচ্ছেন নুরুল আবছার।
কক্সবাজার পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে সদর উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২২ হাজার ৯৯৬ জন। ভোটকেন্দ্র ৮২টি। দলীয় নেতা–কর্মীরা জানান, শহরের ভোট নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কক্সবাজার পৌরসভার ভোটার রয়েছেন ৬৭ হাজার ৫৭৭। সে দিক থেকে এই ভোটাররাই এবার জয়–পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-