শাহপরীর দ্বীপ সড়কে স্ট্রিট লাইট, সিসি ক্যামেরা ও ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন জরুরী

মাহবুব নেওয়াজ মুন্না :


২০১৭ সাল থেকে মায়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় ২০ লাখ মায়ানমারের নাগরিক কক্সবাজারের ২টি সীমান্তবর্তী পর্যটনসমৃদ্ধ উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ায় ৩৩টি অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করে আসছে।

২০১৭ সালে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় অস্থায়ী শিবির স্থাপন করতে দেয়ায় শেষপর্যন্ত স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়ে যায় টেকনাফ গেম রিজার্ভসহ সমগ্র দক্ষিণ কক্সবাজারের ৮ হাজার একর বনভূমি যা স্বয়ং বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগের অধীনে সরকারিভাবে জীববৈচিত্র্যের জন্য সংরক্ষিত বনভূমি ছিল; রিজার্ভ বনভূমিও ধ্বংসের ক্ষতি আর কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়।

আর ২০১৭ সালের পর থেকে উখিয়া-টেকনাফের বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীও অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এখানকার কর্মক্ষম জনশক্তি বেকার হয়ে গেছে, শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত অবস্থায় অস্থায়ী শিবিরে চাকুরীর প্রতি প্রভাবিত হওয়ার কারণে প্রতি বছর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকসহ সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক, বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ফলাফল বিপর্যয় হচ্ছে।

এদিকে টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় প্রায় ৭ লক্ষাধিক বাংলাদেশী স্থায়ী বাসিন্দাও রয়েছেন। তাই সব মিলিয়ে উখিয়া-টেকনাফের কারণে সমগ্র কক্সবাজার জেলায় সবসময় মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছেন।

কক্সবাজার-শাহপরীর দ্বীপ মহাসড়কটির দু’পাশে মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে সবসময় জন চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা শতগুণ বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় প্রতিদিন বহুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ও অঙ্গহানি ঘটছে। দিনের আলো কমে গেলে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত শতশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, পর্যটক, চাকুরীজীবি, মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাওয়া মুসল্লী ও জরুরী জটিল রোগীদের রাস্তা পারাপারের সময় পর্যাপ্ত আলো ও ফুটওভার ব্রিজ একেবারেই না থাকায় রক্তাক্ত দুর্ঘটনা ঘটছে; যা অবর্ণনীয় শোকের ঘটনা। কথায় আছে, “একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না।”

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে শিক্ষা, জনসংখ্যা, পুষ্টিসেবা, জন নিরাপত্তার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিশীল। বর্তমানে কক্সবাজার জেলায় বিশ্বব্যাংকের নানামুখী অনেক উন্নয়নমূলক কাজ লক্ষণীয় ও প্রশংসার দাবীদার। তন্মধ্যে মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেল্টার কাম বিদ্যালয় ভবন নিমার্ণ প্রজেক্ট, হেলথ এন্ড জেন্ডার প্রজেক্ট (HGSP), ইমারজেন্সি মাল্টিসেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট (EMCRP) অন্যতম।

এরূপ পরিস্থিতিতে, ৩০ লক্ষাধিক মানুষের কক্সবাজার-শাহপরীর দ্বীপ মহাসড়কে যাতায়াতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মাত্র ৯৩ কিলোমিটারের এই মহাসড়কের দু’পাশে স্ট্রীট লাইট, সিসি ক্যামেরা ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক প্রকল্প গ্রহণে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিস এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের যথাসম্ভব দ্রুত জরুরী পদক্ষেপ মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে।

  • লেখক : মাহবুব নেওয়াজ মুন্না
  • উন্নয়ন পেশাজীবি।
  • জন্ম ১৯৯৩ সালের ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলাধীন সাবরাং ইউনিয়নের পুরান গ্রামে
  • ২০১৯ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কক্সবাজার সিটি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে এমবিএ এবং কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
  • মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে লেখকের কর্মজীবন শুরু।
  • বর্তমানে ২০১৮ সাল থেকে শেড সংস্থায় কর্মরত। শৈশব থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখালিখির হাতেখড়ি হয়।
  • E-mail: munna161619@gmail.com
  • Mobile No.: +8801628 331340

আরও খবর