প্রার্থীতা ঘোষণা না করেও আলোচনায় কেন খাইরুল আলম চৌধুরী!

বিশেষ প্রতিবেদক :


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই নতুন করে উখিয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানান জল্পনা কল্পনা। চলছে ভোটের হিসাব নিকাশ। কে হচ্ছেন সরকার দলীয় মনোনীত প্রার্থী? কে হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ? প্রার্থীদের মধ্যে কার কোন এলাকায় বাড়তি সুবিধা কিংবা অসুবিধা এই সব নিয়ে চলছে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ।

কোন দিকে যাচ্ছে রাজনীতির ম্যার-প্যাঁচ, ভোট ব্যাংক, প্রার্থীর ইমেজ এই গুলো রয়েছে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুতে।

এবার উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকার দলীয় সমর্থিত প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে কে কে এগিয়ে রয়েছেন সেটাই রয়েছে মূল আলোচনায়। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন পাওয়ার অর্থ হলো নির্বাচনের দৌড়ের অর্ধেক এগিয়ে থাকা।

পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছে ভোটের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতারা কার পক্ষে কে কাজ করছেন সেটা।

অতীত নির্বাচনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রত্না পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী যে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন সেই প্রার্থীই শেষ পর্যন্ত হেসেছেন বিজয়ের হাসি। এবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এর ব্যতিক্রম হবে না বলে স্থানীয় সচেতন মহলের ধারণা।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্য থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে হলে খাইরুল আলম চৌধুরীর কূটকৌশল বুঝেই প্রার্থীদের এগোতে হবে! রত্নাপালং ইউনিয়ন ও হলদিয়াপালং ইউনিয়নে বিশাল একটা ভোট ব্যাংক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী নিয়ন্ত্রণ করেন, এমনটি দাবী করেন কোটবাজার-উখিয়া সিএনজি মালিক ও চালক সমবায় সমিতি লি: এর সভাপতি আরাফাত হোসেন চৌধুরী।

তিনি বলেন, রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ইউপি সদস্য মোক্তার আহমদ, মাহবুব আলম, কামাল উদ্দিন, সেলিম কায়ছার, আবুল হাসনাত চৌধুরী ও হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মেম্বার সরওয়ার কামাল বাদশা ও মোক্তার আহমদগণ খাইরুল আলম চৌধুরীর আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠজন। তাই ভোটের রাজনীতিতে অপরাজিত খাইরুল আলম চৌধুরীর মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয়তা, ক্ষমতা, আন্তরিকতা ও তার বিচক্ষণতাকে পুঁজি করে ভোটের সব হিসাব নিকাশ মুর্হুতের মধ্যে পাল্টে দেওয়ার রেকর্ড অতীতে অনেকবার দেখেছেন উখিয়াবাসী।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসাবে আপাতত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৩ বারের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর চৌধুরী ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরী।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছেন, তারা হলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম জাহাঙ্গীর আলম, হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন চৌধুরী মিন্টু, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেল চৌধুরী ও উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক গফুর মিয়া চৌধুরী।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছেন, তারা হলেন, উখিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান সফল মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও দৃশ্যমান উন্নয়নের মাধ্যমে উখিয়ার গ্রামগঞ্জের চিত্র বদলে দেওয়া কামরুনেচ্ছা বেবি ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিন আক্তার।

উখিয়া নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ১৮ মে উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতে আসতে প্রার্থী তালিকা আরো দীর্ঘ কিংবা সংক্ষিপ্তও হতে পারে।

রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরীও তিনি এক সময় জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন, এখন তিনি মূলত: সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির অনুসারী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।

তিনি এখনও আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদান করেননি। তবে মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। রত্নাপালং ইউনিয়নের পাশাপাশি পুরো উখিয়া উপজেলায় তার ভালোই জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়াও একজন দানবীর নেতা হিসাবে সর্বত্রেই তার সুনাম রয়েছে। খাইরুল আলম চৌধুরী রত্না পালং ইউনিয়নসহ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ভোটের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই তাঁকে সকল সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজের পক্ষে রাখার জন্য এক প্রকার দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন!

রত্নাপালং ইউপি সাবেক সদস্য আবুল ফজল বলেছেন, অতীতের সকল নির্বাচনে দেখা গেছে, যখনই ভোট আসে তখনই সর্বাগ্রে রত্না পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী আলোচনায় চলে আসেন। ভোটের রাজনীতিতে ম্যাজিকম্যান হিসাবে খ্যাত খাইরুল আলম চৌধুরীকে প্রার্থীরা নিজের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন।

তিনি পক্ষে থাকার অর্থ হলো ওই প্রার্থীর বিজয় অনেকটা নিশ্চিত। সমন্বয়ক হিসেবে তিনি উখিয়া উপজেলার ভোটের রাজনীতিতে অদ্বিতীয়। ভোটারদের মন জয় করার ক্ষেত্রে খাইরুল আলম চৌধুরীর জুড়ি নেই। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রয়েছে তার সুখ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতা।

অপরদিকে তিনি উখিয়া-টেকনাফের ভোটের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণকার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির অন্যতম বিশ্বস্ততা ও আস্থাশীল ব্যক্তি। সব মিলিয়ে মিষ্টভাষী খাইরুল আলম চৌধুরী আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অন্যতম ফ্যাক্টর।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুত্রে জানা গেছেন, ভোটের মাঠে রাজনৈতিক সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে খাইরুল আলম চৌধুরী বেশ সফলতা দেখিয়েছেন ইতিপূর্বে।

তিনি নির্বাচনের সমন্বয়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে হাসেম চৌধুরী, আব্বাস উদ্দিন, নূরুল কবির চৌধুরী, নুরুল হুদা গংকে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। এছাড়াও সরওয়ার জাহান চৌধুরীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সুলতান মাহমুদ চৌধুরী ও ছেনুয়ারা বেগমকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এসময় প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেন।

অসমর্থিত সুত্রে জানা গেছে, তিনি আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারন তিনি নির্বাচন মুখি জননেতা।

আরও খবর