বিশেষ প্রতিবেদক :
পরকীয়ার মামলায় জয় মল্লিক (২২) নামক একজন পরকীয়া প্রেমিককে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ডের মধ্যে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৪৯৭ ধারায় ৫ বছর এবং ৪৯৮ ধারায় ২ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নম্বর-৪ এর বিজ্ঞ বিচারক আখতার জাবেদ এ রায় ঘোষণা করেন। একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবু তাহের এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলায় বাদী পক্ষে অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ এবং আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট আলহাজ্ব নুরুল আমিন ও অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম সিকদার মামলাটি পরিচালনা করেন। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামী বিশ্বজিৎ মল্লিক আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ জানিয়েছেন, রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের তেচ্ছিপুল মল্লিক পাড়ার অরুণ চন্দ্র মল্লিক ও রিনা মল্লিকের পুত্র বিশ্বজিৎ মল্লিকের সাথে কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোনার পাড়ার তপন দে ও শেলী দে’র কন্যা প্রিয়া দে’র ২০১৯ সালে সনাতন ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তানও জন্মলাভ করে।
বিশ্বজিৎ মল্লিক নিজ বাড়ি হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার শহরে একটি সেলুনে কাজ করতো। সেই সুযোগে বিশ্বজিৎ মল্লিকের স্ত্রী দুশ্চরিত্রবান প্রিয়া দে একই এলাকার দুলাল মল্লিক ও মঞ্জু মল্লিকের পুত্র জয় মল্লিক (২২) এর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারী গভীর রাতে স্বামী বিশ্বজিৎ মল্লিককে বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে পরকীয়া প্রেমিক জয় মল্লিকের সাথে আপত্তিকর মেলামেশার সময় স্ত্রী প্রিয়া দে’কে স্থানীয় লোকজন হাতে নাতে ধরে ফেলে। পরে ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি বিশ্বজিৎ মল্লিকের অনুপস্থিতিতে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এসে তার বাড়ি থেকে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণ সহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বিশ্বজিৎ মল্লিক বাদী হয়ে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৪৯৭/৪৯৮/৩৮০/৫০৬(২)/৩৪ ধারায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নম্বর-৪ এ একটি মামলা (নালিশী দরখাস্ত) দায়ের করেন। যার সিআর মামলা নম্বর : ৪১/২০২৩ ইংরেজি। মামলায় বিশ্বজিৎ মল্লিক এর স্ত্রী প্রিয়া দে, শ্বাশুড়ি শেলী দে, পরকীয়া প্রেমিক জয় মল্লিক ও তার মা মঞ্জু মল্লিক সহ ৪ জনকে আসামী করা হয়।
আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ মামলা (নালিশী দরখাস্ত) টি আমলে নিয়ে রামু থানার ওসি’কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। রামু থানার ওসি’র পক্ষে এসআই মোহাম্মদ আমীর হোসেন তদন্ত করে ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ আদালতে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে প্রাথমিকভাবে ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আদালত তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হলে আদালতে ৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, সাক্ষীদের আসামীদের পক্ষে জেরা, প্রিয়া দে’র সাথে পরকীয়া প্রেমিক জয় মল্লিকের কথোপকথনের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট পর্যালোচনা, আলামত প্রদর্শন, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়। রায় ঘোষণার দিনে পরকীয়া প্রেমিক আসামী জয় মল্লিক’কে দোষী সাব্যস্থ করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ ফৌজদারী দন্ড বিধির ৪৯৭ ধারায় ৫ বছর এবং ৪৯৮ ধারায় ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। রায় অনুযায়ী ২টি ধারায় প্রদত্ত সাজা একইসাথে চলবে। রায়ে মামলার অন্য ৩ জন আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
দন্ডিত আসামীকে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয় বলে বেঞ্চ সহকারী আবু তাহের জানিয়েছেন। রায় ঘোষণার পর বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ তার প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, তার মক্কেল বিশ্বজিৎ মল্লিক আদালত থেকে ন্যায় বিচার পেয়েছেন।
ঘোষিত রায় সম্পর্কে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি ও কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেছেন, সামাজিক অবক্ষয় ও রুচির দুর্ভিক্ষের এ যুগে এ রায়ের কারণে সমাজে একটা ইতিবাচক ম্যাসেজ যাবে। যা খুবই দরকার ছিলো। তার মতে, এ রায় অনুসরণযোগ্য।
এ রায়কে একটি সময়োপযোগী রায় হিসাবে উল্লেখ করে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক বলেন, সমাজের অনাচার, বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে সুস্থ অবস্থা ফিরিয়ে আনতে, নৈতিকতা ও শিষ্টাচার সমৃদ্ধ মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ গড়তে এ রায় উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে।
রায় সম্পর্কে হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু বলেছেন, সামাজিক বিভিন্ন অনাচারের বিরুদ্ধে, অনাকাঙ্ক্ষিত দাম্পত্য কলহ বন্ধে এ রায় নিঃসন্দেহে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখবে। অসম বয়সের বিয়ে সহ সামাজিক ট্রল বন্ধে এটি একটি যুগান্তকারী রায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কি রয়েছে এই ২টি আইনে :
ফৌজদারী দন্ড বিধির ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, যে কোন বিবাহিত ব্যক্তি যদি অন্য কোন বিবাহিত নারীর সাথে জেনেশুনে যৌন সম্পর্ক করে, তাহলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে।
এ ক্ষেত্রে সেই পুরুষটির ৫ বছরের কারাদন্ড, অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। ৪৯৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোন বিবাহিত নারীকে ফুসলিয়ে বা প্ররোচনার মাধ্যমে কোথাও নিয়ে যাওয়া এবং তাকে অপরাধজনক উদ্দেশ্যে আটক রাখা অপরাধ। এ ধারা অনুযায়ী অপরাধী ব্যক্তিকে ২বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড সহ উভয় ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে।
আপনার মন্তব্য দিন
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-