শামীম রাহমান
সরকারের অন্যতম ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণ। প্রকল্পটির মাধ্যমে এরই মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়াল গেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ তৈরি হয়েছে।
তবে রামু-ঘুনধুম অংশ আপাতত বাস্তবায়ন করবে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অংশের কাজ স্থগিত হওয়ায় কক্সবাজার রেল প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। তবে এর বাইরেও আরো ১ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় কমতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রকল্পটির বর্তমান শিরোনাম ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’। এরই মধ্যে সেটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব বাংলাদেশ রেলওয়েতে জমা দিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তাতে রামু-ঘুনধুম অংশ বাদ দিয়ে প্রকল্পটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’।
রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পটি দুই ধাপে বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালের জুলাইয়ে অনুমোদন পায়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে দোহাজারী-কক্সবাজারের ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে নতুন রেলপথ দিয়ে ট্রেনও চলাচল করছে। আর দ্বিতীয় ধাপে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল রামু থেকে ঘুনধুম অংশের ২৮ দশমিক ৭২ কিলোমিটার রেলপথ। এ পথে কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের ঘুনধুমে দুটি স্টেশনও হওয়ার কথা ছিল।
রামু-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনাটি মূলত ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট-১-এর অংশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ট্রান্স এশিয়ান রুট-১ ভারতের গেদে থেকে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। এরপর ঈশ্বরদী-বঙ্গবন্ধু সেতু-জয়দেবপুর হয়ে আসবে টঙ্গী পর্যন্ত। সেখান থেকে আখাউড়া-চট্টগ্রাম ও দোহাজারী-রামু হয়ে ঘুনধুম সীমান্ত দিয়ে চলে যাবে মিয়ানমারে। প্রস্তাবিত বাকি তিনটি ট্রান্স এশিয়ান রুটও এ রুটের সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে রামু-ঘুনধুম অংশে ২৯ কিলোমিটার রেলপথের কাজ স্থগিত হওয়ায় বাংলাদেশের সবক’টি ট্রান্স এশিয়ান রুটই জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণেই মূলত রামু-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণকাজ স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান। এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঘুনধুম থেকে মিয়ানমারের রেল নেটওয়ার্কে রেলপথটি সংযুক্ত করার কোনো পদক্ষেপ মিয়ানমার গ্রহণ করেনি। এ কারণে আমরা রামু-ঘুনধুম রেলপথের কাজ আপাতত বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নয়, দুই-তিন বছর আগেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
বর্তমান উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ এবং বাকি ৪ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা সংস্থান হয় সরকারি তহবিল থেকে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে রামু-ঘুনধুম অংশ বাদ দিয়ে নির্মাণ ব্যয় ১২ হাজার ৭১৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে নির্মাণ ব্যয় কমে যাওয়ায় কমেছে এডিবির ঋণের পরিমাণও। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এডিবি থেকে ৯ হাজার ৯৩ কোটি টাকা ঋণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
ডিপিপির দ্বিতীয় সংশোধনীতে রামু-ঘুনধুম অংশ স্থগিত রাখা ছাড়াও আরো ছয়টি অনুষঙ্গের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো নির্মাণ ব্যয়ে প্রভাব রেখেছে। সেগুলো হলো ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, মূল রেলপথ নির্মাণ, নতুন আরোপিত সিডি-ভ্যাট, পরামর্শক, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট ও মূল্য সমন্বয়। এ খাতগুলোর কোনোটিতে ব্যয় বেড়েছে, কোনোটিতে আবার কমেছে।
সংশোধিত প্রস্তাবটি যদিও এখনো চূড়ান্ত নয় এবং নির্মাণ ব্যয় আরো প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ঘুনধুম অংশ বাদ পড়ায় নির্মাণ ব্যয়ে এ প্রভাব পড়েছে। তবে ব্যয় কাটছাঁটের কাজ এখনো চলমান। এজন্য পরামর্শকদের নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখানে ফিডিক কন্ট্রাক্টের অনেক ধরনের নিয়ম রয়েছে। কাজ চূড়ান্ত না করা পর্যন্ত ব্যয় কত কমছে তা বলা মুশকিল। আমরা আশা করছি নির্মাণ ব্যয় আরেকটু কমবে।’
চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ। শেষ পর্যায়ের কাজগুলো চলমান রয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যেই সব কাজ শেষ করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
*বণিক বার্তা
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-