বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে রাতভর গোলাগুলি হয়েছে। পাওয়া গেছে ভারী গোলার শব্দ। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন সীমান্তের মানুষ।
আজ সোমবার সকাল থেকে ভারী গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু গুলির শব্দ কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
এদিকে নিরপাত্তার কারণে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের ভ্রমণে চলাচল বন্ধ রেখেছে বিজিবি।
গত শনিবার বিকেলে মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ পাঁচজন রোহিঙ্গা একটি ডিঙি নৌকায় বাংলাদেশ জল সীমানায় ঢুকে শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে ভিড়ে। পরে বিজিবি তাদের ফেরত পাঠায়।
সীমান্তে গোলাগুলিতে নিরাপত্তার কারণে নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে মানুষের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আজকেও সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেটি মিয়ানমারের অনেকে ভেতরে। তবে নতুন করে যাতে কেউ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছি।’
টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা গতকাল রোববার পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ১৬৫ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছি। পাশাপাশি সীমান্তে বসবাসকারী লোকজনকে জরুরি কাজ ছাড়া সীমান্তে ঘুরাঘুরি না করতে নিষেধ করা হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানায়, রোববার ভোর রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা, হোয়াইক্যং ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে ভারী গোলার শব্দ পাওয়া গেছে।
শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটের টোল আদায়কারী ছিদ্দিক আহমদ বলেন, ‘নাফ নদীর বুকে জেটি ঘাটে ভ্রমণে প্রতিনিয়ত মানুষের আনাগোনা ছিল। কিন্তু সীমান্তের গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার কারণে এই জেটিতে দুইদিন ধরে লোকজনের যাতায়াত বন্ধ রেখেছে। এছাড়া কিছুদিন আগে টেকনাফ-সেন্টমাটিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা যারা সীমান্তের বাসিন্দা রয়েছি, ওপারের গোলাগুলিতে ব্যাপক প্রভাব পরেছে।’
হ্নীলার বাসিন্দা মো. সাইফুল বলেন, ‘আমার এলাকায় রাতে অনেক ভারি গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। সকাল থেকে গোলার শব্দ কমেছে। কিন্তু থেমে থেমে গোলার শব্দ পাচ্ছে সীমান্তের লোকজন। যার ফলে মানুষের মাঝে ভয়ভীতি কমেনি।’
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধে রাখাইনের মংডু শহরের বাঘগোনা, হাদিবিল, নলবনিয়া নয়াপাড়া গ্রামে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালায়। ফলে কয়েক দিন ধরে এসব এলাকার প্রায় চার হাজার লোক বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্তবর্তী সিকদারপাড়া ও মন্নিপাড়া গ্রামে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা করছে বলে জানা গেছে।
টেকনাফের জাদিমুড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা হাসমত উল্লাহ বলেন, মংডু শহরের এতিল্লাপাড়ায় বসবাসরত চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। মিয়ানমার জান্তা সরকার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলেছে।
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ৯ নম্বর ওর্য়াডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘রাতে বন্ধ থাকলেও সকাল থেকে আবারও তারা সীমান্তে ভারী গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বিজিবির সহায়তায় সীমান্তের লোকজনকে জরুরি কাজ ছাড়া অযথা সীমান্তে ঘুরাঘুরি না করতে নিষেধ করেছি।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-