রাখাইনে সংঘাত: আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশ সীমান্তের দুই গ্রামের বাসিন্দা

বিশেষ প্রতিবেদক :

মিয়ানমারের জান্তা সেনা ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও লড়াই অব্যাহত রয়েছে। সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে সেনাদের যুদ্ধবিমানকে একের পর এক দেশটির আকাশে চক্কর দিতে দেখা যাচ্ছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলি থামছে না। এতে সীমান্তের এপাশে বাংলাদেশের কয়েক গ্রামের বাসিন্দা আতঙ্কে সময় পার করছেন। এ পরিস্থিতিতে তুমব্রু সীমান্তের চাকমাপাড়া ও কোনাপাড়ায় বসবাসকারী অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে উঠছেন তারা।

গতকাল বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান কক্সবাজার ও বান্দরবানের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেই সেখানে যান। সীমান্ত এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী সব পর্যায়ের বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন বিজিবি মহাপরিচালক।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলম বলেন, রোববার সকাল থেকে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকাগুলোতে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দুপুরে তুমব্রু সীমান্তের অদূরে মিয়ানমারের তিন-চারটি হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান আকাশে চক্কর দিয়েছে। এতে এ এলাকায় বসবাসকারী আড়াই হাজার মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কের মধ্যে। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রোধে আমরা সজাগ আছি।

তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, গোলাগুলির পাশাপাশি সীমান্তের ওপারে হেলিকপ্টার থেকেও মর্টারের গোলা ছোড়া হয়। সীমান্তে বসবাসকারীরা খুব ভয়ে আছেন। হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া মর্টারের গোলা এপারে এসে পড়লে বিপদ ঘটতে পারে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, রোববারও সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আমরা সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছি।

জানা গেছে, মিয়ানমারের জান্তার সেনা ও সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে কিছুদিন ধরে চলে আসা সংঘাত রাখাইনের মংডুতেও ছড়িয়ে পড়েছে। জীবন বাঁচাতে অনেকে নিজ বাড়ি ছেড়েছেন। অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রোহিঙ্গাদের একটি দল সীমান্তের নাফ নদের মংডুর খিলাধল ও নলবনিয়া এলাকায় অবস্থান নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ রিয়াদ বলেন, রাখাইনে ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। অনেকে সেখান থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা বলছে, নাফ নদের পাড়ে কয়েকশ মানুষ অপেক্ষা করছে। তারা সুযোগ বুঝে এপারে ঢুকে পড়তে পারে।

জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে শনিবার ১৩ মর্টার শেল ও ১ রাউন্ড বুলেট কক্সবাজার সীমান্তে এসে পড়ে। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কাছে লিখিত পত্র পাঠিয়েছে বিজিবি।

আরও খবর