তাজুল ইসলাম পলাশ :
দেশে ভোক্তাপর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজিতে ২৯ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর আগের মাসে এটি ২৩ টাকা বেড়েছিল।
চলতি বছরের ২ জানুয়ারি নতুন দাম নির্ধারন হয়। জানুয়ারির জন্য প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৩৩ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ৪০৪ টাকা। কিন্তু বিইআরসির বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মূল্যেও মিলছেনা এলপি গ্যাস। ১২ কেজি প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম নেওয়া হচ্ছে ১৫০০-১৫৫০ টাকা পর্যন্ত।
কক্সবাজারে এলাকাভেদে গ্যাস ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ইচ্ছামত দাম নিচ্ছেন এমন অভিযোগ ভোক্তাদের। প্রতিটি এলপিজি বিক্রি করা দোকানে নির্ধারিত মূল্যতালিকা প্রদর্শনেরও নির্দেশনা আছে। কিন্তু দুটোই মানা হচ্ছে না।
দূর্বল মিনিটরিং ও অভিযান না থাকায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তারা। অভিযানের চোখকে ফাঁকি দিতে কিছু দোকানে তালিকা টাঙানো হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
ভোক্তারা বলছেন, দাম কমিয়ে দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। তবে এ নিয়ে মাঠে কোনো সংস্থার তদারকি নেই। ফলে ফায়দা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ১৫০০ টাকার নিচে এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না। শহরের বাইরে এর দাম আর-ও বাড়তি।
এদিকে শহরের কলাতলী এলাকায়, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, চন্দ্রীমা আবাসিক, টেকপাড়া, ঘোনার পাড়া, বৈদ্যঘোনা, নুনিয়া ছড়া, লারপাড়া, বাস টার্মিনাল, জেল গেইট, বাংলা বাজার, লিংক রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়।
কয়েকজন গ্রাহক ও খুচরা বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সিলিন্ডারগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সিল লাগানো হলেও তা কাজে লাগছে না। সরকারিভাবে বাজারজাতকৃত বোতলগুলোর গায়ের সিলমোহর ও স্টিকার দ্রুত মুছে ফেলা হয়। ফলে বোঝা যায় না কোনটা সরকারি কোনটা বেসরকারি। কারণ একই দোকানে দুই ধরনের বোতলই বিক্রি হয়। এর সুযোগে দোকানিরা সরকারি ও বেসরকারি উভয় বোতল একই দামে বিক্রি করে। এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সরকারিভাবে বোতলজাত সিলিন্ডার বাজারে খুব কমই সরবরাহ করা হয়। বেশিরভাগ এলপিজি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে সরাসরি বিক্রি করা হয়। ফলে এলপিজির দাম নির্ধারণে সরকারি ভর্তুকি কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না।
এলপিজি’র সাথে সংশ্লিষ্ট ও ডিলারদের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৬৫০- ৭০০ টির মতো গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান আছে। যারমধ্যে সদরে ও খুরুশকুলে আছে ২৪২ টি। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নিজস্ব নাম ব্যবহার করে গ্যাস সিলিন্ডার বাজারজাত করে আসছে। তারমধ্যে ১৮-২১ টি মোড়কে’র এলপিজি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবে টোটাল ছাড়া অন্যসব এলপি দেশের বিভিন্ন কোম্পানির নামে।
যার মধ্যে, বেক্সিমকো, টোটাল ( সরকারি), বিএম এনার্জি, যমুনা, ওমেরা, জেএমআই, পেট্রোম্যাক্স, পদ্মা, ফ্রেশ, ডেলটা, আই গ্যাস, ই উ নি গ্যাস, ইউনিভার্সেল, ইউরো, বিন হাবিবসহ মোট ২১টির মতো এলপি গ্যাস রয়েছে।
খুচরা ব্যাবসায়ীরা জানালেন, একটি গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার বিক্রি করলে ২০-৫০ টাকার ব্যবসা হয়। ১২ কেজি এলপিজি ১৬০০ টাকায় বিক্রি করবে কেন? হয়তো ৫০ টাকা পরিবহন খরচ নিতে পারে। বিইআরসির নির্ধারিত দামের বাইরে বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই।
জেলা এলপিজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরওয়ার আলম বলেন, ‘সবাই একদামে বিক্রি করেনা এটা ঠিক। কিন্তু সমিতির একটা নির্দেশনা রয়েছে। কোন ভোক্তা যদি অভিযোগ করে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত দাম যাঁরা নিচ্ছে তাদের দোকানে অভিযান চালানো প্রয়োজন। কারণ কয়েকজনের কারণে সকল ব্যবসায়ীর দূর্নাম হচ্ছে। কোম্পানি থেকে বের হওয়ার পর গ্রাহকদের কাছে যাওয়া পর্যন্ত পরিবহন খরচ, মজুরি, দোকান ভাড়া ইত্যাদি খরচ পড়ে। হয়তো এর জন্য কিছু বাড়াতে পারে কিন্তু! অতিরিক্ত দাম নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-