মৃত্যুর ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ

উখিয়ায় পাহাড় কাটতে গিয়ে শ্রমিকের মৃত্যু: নেপথ্যের কারিগর হেলাল সিন্ডিকেট ধরাছোঁয়ার বাইরে!

বিশেষ প্রতিবেদক :

  • তাদের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা সহ রয়েছে একাধিক মামলা

উখিয়ার জালিয়াপালং সোনাইছড়ি এলাকার আপন দুই ভাইয়ের পাহাড় কাটা যেনো থামছেনা। সমিতি পাড়া এলাকার মৃত কাসেম প্রকাশ দুবাই কাসেমের দুই ছেলে হেলাল ও সরওয়ার সিন্ডিকেট যেনো অপ্রতিরোধ্য। তাদের দুইভাইয়ের নেতৃত্বে ঐ এলাকার পাহাড় এখন সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জালিয়াপালং সোনাইছড়ি সমিতি পাড়া এলাকার সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটছে হেলাল ও সরওয়ার। তাদের বিষয়ে স্থানীয় কেউ মুখ খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কেউ মুখ না খোলার বিষয়টি অনুসন্ধান করে জানা যায়, হেলাল ও সরওয়ার ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে কাউকে তোয়াক্কা না করে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে যাচ্ছে৷ যার মধ্যে সংরক্ষিত বনভূমি দখল ও পাহাড় কাটার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে। তবে, মামলা দিয়ে দায় সারছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়,অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে জালিয়াপালং বিটে দুটি মামলা রয়েছে(যার মামলা নং জালিয়াপালং বিট-২৩/২০২৩ইং/ ইনানী রেঞ্জ-৬২/২০২৩ইং ও জালিয়াপালং বিট-৮/২২-২৪ইং, ইনানী রেঞ্জ -৩১)।

গত ১০ ডিসেম্বর খতিয়ানভুক্ত জমি দাবি করে পাহাড় কাটার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আনিসুর রহমান।

হেলাল উদ্দিনের পাহাড় কাটার সময় গতকাল ভোরে পশ্চিম পাইন্যাশিয়া এলাকার মোসলেম উদ্দিন(১৯) নামের এক যুবক মারা গেছেন। মৃত্যুর খবরে উখিয়া থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিহত যুবক শ্রমিক হিসেবে হেলালের পাহাড়ে কাজ করতে গেছিলেন। এ ঘটনার পর থেকে আত্নগোপনে রয়েছে হেলাল ও সরওয়ার।

ঐ এলাকায় একাধিক পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে এ সিন্ডিকেট। যার দুটি বন মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা যায়। এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের পাহাড় কাটা ও বনভূমি দখল নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়।

গতকাল দুপুরে হেলাল সিন্ডিকেটের পাহাড় কাটার সময় মাটিচাপা পড়ে নিহতের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) সালেহ আহমদ ও ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল আমিন।

তবে, ঘটনাস্থল দেখিয়ে না দিতে হেলাল স্থানীয়দের নির্দেশ প্রদান করেন বলে জানা যায়। তবে জালিয়াপালং বিটের দায়িত্বরতদের সহযোগিতায় প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ সঠিক তথ্য নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

জালিয়াপালং বিট কর্মকর্তা মো. সোহেল হোসাইন মুঠোফোনে জানান,”পাহাড়ের মাটিচাপা পড়ে নিহতের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা প্রশাসন ও রেঞ্জ কর্মকর্তা মহোদয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে বন মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. শামীম হোসেন বলেন,” আমরা খবর পাওয়ার পর নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল তৈরিসহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করি। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

বিষয়টি নিয়ে ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল আমিন জানিয়েছেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে আসছে। আমি দায়িত্ব নিয়েই হেলাল ও সরওয়ারের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার মামলা দায়ের করেছি যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার অভিযানও চালানো হয়েছে। গেল রাতেও গভীর রাতে পাহাড় কাটার খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের খবর আগেভাগে জানতে পেরে সংঘবদ্ধ দলটি পালিয়ে যায়।

আমরা চলে যাওয়ার পর আবারও পাহাড় কাটতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে। এ পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে যারা জড়িত, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) সালেহ আহমদ বলেন,” পাহাড় কাটার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বন মামলা সহ পরিবেশ আইনে আরও একটি মামলা রুজু করা হবে।”

পাহাড় কাটার ঘটনায় কারা জড়িত ছিলো এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সে প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম বলেন,” এ ঘটনায় হেলাল ও সরওয়ারের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো। তারা ঐ এলাকার পাহাড় কাটার সাথে জড়িত। খতিয়ানভুক্ত জমি হলেও পাহাড় কাটা বেআইনি। তাদের কোনো অনুমতির কাগজপত্র নেই।”

আরও খবর