মিয়ানমারে আশঙ্কাজনক হারে জ্বালানি-খাদ্য পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূল দিয়ে মিয়ানমারে জ্বালানি তেল ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য পাচার আশংকাজনক হারে বেড়েছে।

গত ১ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পাচারকালে ২৮ জনকে আটক করেছে। র্যা ব-১৫ এসব তথ্য জানিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বিশেষ সভা করেছে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় জ্বালানি ও ভোজ্যতেল বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানকে সাপ্তাহিক তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর জমা দিতে বলা হয়েছে। তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারি বৃদ্ধিসহ নানা সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরানের সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, জেলার ৩৫টি পাম্প, বার্জ মালিকরা উপস্থিত ছিলেন। সভার পরপরই বিকাল ৪টায় টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে অভিযান চালিয়ে ২৫টি ড্রামে মোট ১৪১৫ লিটার অকটেন, ৪০ কেজি পেঁয়াজ, ৩১ কেজি রসুন, ৩৬ কেজি আদাসহ পাচারচক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে র্যা ব-১৫।

র্যা ব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে পুলিশে হস্তান্ত করা হয়। র্যা ব চোরাচালান ঠেকাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি মিয়ানমারে জ্বালানি, ভোজ্যতেল ও খাদ্যপণ্য পাচারের বিষয়টি নজরে আসে। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তৎপর হয়ে ওঠেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান সংঘাত তীব্র হয়ে উঠেছে, যার কারণে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

এমনকি পশ্চিম আরাকানের (রাখাইন রাজ্য) বন্দর শহর মংডুর সঙ্গে জেলা ও বিভাগীয় শহর আকিয়াব এবং রাজধানী ইয়াংগুনের যোগাযোগ সড়কও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এসব কারণে পণ্যসামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। পশ্চিম আরাকানসহ আকিয়াব, ভুচিদং, রাশিদং ও মংডু এলাকায় নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। এ সুযোগে কক্সবাজারের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট মিয়ানমারে পাচারে তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের মংডু শহরে ৫০ কেজির এক বস্তা চালের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় এখন প্রায় ৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম প্রায় ১৮০ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৪৫০ টাকা, প্রতি লিটার অকটেনের দাম ১৬০০ টাকা, প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১৪০০ টাকা। অথচ বাংলাদেশে প্রতি লিটার অকটেন ১৩৫ টাকা ও ডিজেল ১১১ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর সায়বিন প্রতি লিটার ১৮০ টাকা। এজন্য বাংলাদেশ থেকে জ্বালানি ও ভোজ্যতেল কিনে মিয়ানমারে বেচতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা।

কক্সবাজারের কমপক্ষে ২২টি পয়েন্ট ব্যবহার করে নৌকা ও ট্রলারে পাচার হচ্ছে এসব তেল ও পণ্য। কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক, নুনিয়ারছড়া, মাঝের ঘাট, খুরুশকুল, চৌফদন্ডী, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, সোনাপাড়া, টেকনাফের শাপলাপুর, লম্বরী, মহেশখালীয়াপাড়া, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার সমুদ্র উপকূল ব্যবহার করে তা পাচার করে যাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। যাদের একটি তালিকাও ইতিমধ্যে তৈরি করেছে প্রশাসন। তালিকায় জ্বালানি ও ভোজ্য তেলের ডিলার প্রতিষ্ঠানের মালিক, জনপ্রতিনিধি ও জেলেদের নাম এসেছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, পাচার ঠেকাতে সভা হয়েছে। বুধবার দুপরে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি, কোষ্টগার্ড, জেলার ৩৫টি পাম্প, ৩০টি প্যাক পয়েন্ট, বার্জ মালিকদের ডাকা হয়। তিনি বলেন, সভায় জ্বালানি ও ভোজ্যতেল বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানকে সাপ্তাহিক তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর জমা দিতে বলা হয়েছে।

কে ক্রয় করছেন, কী পরিমাণ ক্রয় করছেন, কত দিন পর ক্রয় করছেন, তালিকায় তা উল্লেখ থাকবে। তালিকাটি উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসন বরাবরে পাঠাবে। তালিকায় কোনো প্রকার অসঙ্গতি থাকলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকূল-পয়েন্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারি বৃদ্ধিসহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

আরও খবর