কক্সবাজারে নির্বাচনের আগে-পরে যে ভূমিকায় বিএনপি

মমতাজ আহমদ :

গত ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। উক্ত নির্বাচন বর্জন করেছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচির অংশ হিসেবে হরতাল থাকলেও কক্সবাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের তেমন কোন কর্মসূচি চোখে পড়েনি। সাধারণ জনগণ উৎসাহ উদ্দীপনায় ভোট প্রদান করেছে কক্সবাজার জেলার ৪টি আসনে এবং নির্বাচিত করেছে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে।

তবে কক্সবাজারের জেলা বিএনপি, উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক কর্মসূচি পালন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে দাবী করলেও বেশিরভাগ এলাকায় দেখা গেছে বিএনপি সমর্থক এবং বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের প্রার্থী তথা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং ভোট কেন্দ্রেও তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মীদের এ অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা বিএনপি অনেক বিএনপি নেতা ও কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। এছাড়া কিছু নেতাকর্মীকে তারা বিএনপির কেউ নন বলে দাবী করেছেন। তাদের মধ্যে একজন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও তাকে বিএনপির কেউ নন বলে দাবী করে প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করে বিএনপি।

তবে চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিনকে বিএনপির কেউ নন দাবী করার আগের দিন তিনি ফেসবুক পেইজ থেকে ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি বিএনপি করলেও আমার দল যেহেতু নির্বাচনে আসেনি তাই আমি এ নির্বাচনে আমার পছন্দের প্রার্থী সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আকতারের পক্ষে নির্বাচন করব। কেননা আমি রাজনীতি করি তাই ভোট না করে আমি থাকতে পারি না’। মূলত এর পরদিনই তাকে বিএনপির কেউ নন বলে দাবী করে জেলা ও উখিয়া বিএনপি।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহীন আকতারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় বহিষ্কার করা হয় টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সদস্য ও টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান, উখিয়া উপজেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুর রহিম, টেকনাফ পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম, বাহারছড়া ইউনিয়ন (উত্তর) বিএনপির সভাপতি আবদুল হক ও হ্নীলা ইউনিয়ন (দক্ষিণ) বিএনপির সদস্য আমির হোসেন ও কক্সবাজার জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, টেকনাফ উপজেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মর্জিনা আক্তার মর্জিনাকে।

অপরদিকে কক্সবাজার-৩ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তথা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের পক্ষে নির্বাচন করায় রামু উপজেলা বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. জাফর আলমকেও বহিষ্কার করে বিএনপি।

এছাড়া কক্সবাজার-২ আসনে (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ শরীফ বাদশাহর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে বিএনপির দুই নেতাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তারা হলেন মহেশখালী উপজেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন ও আবদুর রহিম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক বিএনপি নেতা মনে করছেন, বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে আসেননি তাই বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিংবা সতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের মতে, কিছু নেতাকর্মী আছে তারা ভোট আসলে ভোটে অংশগ্রহণ না করে থাকতে পারে না। তবে তারা দাবী করেন এ সংখ্যাটা সামান্য।

অপরদিকে বহিষ্কৃত হওয়া এক বিএনপি নেতা দাবী করেছেন, কক্সবাজারে বিএনপির রাজনীতি মূলতঃ এখন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। আর তাতে বিরক্ত বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মাঝে মধ্যে কক্সবাজার জেলা বিএনপি কার্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন লক্ষ্য করা গেলেও তা মাঠে-ময়দানে কার্যকর হচ্ছে না বলে দাবী করছেন তিনি।

অপরদিকে রামু, উখিয়া, কক্সবাজারের বিএনপির একাধিক নেতার কাছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে এ নির্বাচনকে তারা একতরফা, ডামি ও সাধারণ জনগণের ভোট বর্জনের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছেন। অনেক নেতা দাবী করেছেন, সংসদে বিরোধী দল কে হবে সেটাও এখন মানুষ জানে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নাকি জাতীয় পার্টি?

তবে সাধারণ বিএনপির সমর্থকরা দাবী করেছেন, নির্বাচন চলাকালীন বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি যেমন লক্ষ্যনীয় ছিল ঠিক তেমনি কর্মসূচিতেও কক্সবাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের তেমন সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি নির্বাচন চলাকলীন থেকে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত। অনেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছেন ভোট বর্জন বিএনপির সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত।

তবে উক্ত বিষয় সম্পূর্ণরূপে নাকচ করে দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না।

তারা বলেন, নির্বাচন চলাকালীন যেমন আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেছি ঠিক তেমনি নির্বাচনের পর কেন্দ্র থেকে যে কর্মসূচি দেওয়া হবে তা যথাযথ নিয়মে পালন করা হবে।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে আমাদের কোন রকমের অবহেলা নেই। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে নির্বাচনে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশগ্রহণ করে নাই সে নির্বাচন কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এছাড়া বহিষ্কৃত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান এখনও একই রকম রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না বলেন, সরকার একটি নির্বাচন শেষ করেছে। তবে এ নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। কারণ উক্ত নির্বাচন বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল বয়কট করেছে।

তিনি আরও জানান, নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি থেকে এখনও কোন কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচি দেওয়া হবে সেভাবে কর্মসূচি পালনে জেলা বিএনপি বদ্ধপরিকর। আর নির্বাচন চলাকালীন যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের বহিষ্কার এখনও বহাল রয়েছে। পরবর্তীতে আলাপ-আলোচনা করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আরও খবর