গাজায় হামলার শততম দিন আজ, কী কী ক্ষয়ক্ষতি হলো

অনলাইন ডেস্ক :

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের ১০০তম দিন আজ (১৪ জানুয়ারি)। দীর্ঘ সময়ের দমনপীড়ন ও গুম-খুনের প্রতিবাদে গত বছরের ৭ অক্টোবর সীমান্ত ভেঙে ইসরাইলের অভ্যন্ত হামলা চালায় গাজার প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। তার পর থেকেই অবরুদ্ধ উপত্যকায় জল, স্থল ও আকাশ পথে হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার বাহিনী। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও হামলা চালানো হচ্ছে।

টানা ছয় সপ্তাহ সংঘর্ষের পর গত ২৪ নভেম্বর সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় হামাস ও ইসরাইল। প্রথমে ৪ দিন বিরতি দিয়ে বন্দী বিনিময় চুক্তি হলেও পরে তা দুই দফায় আরও ৩ দিন বাড়ানো হয়। সাময়িক বিরতির সময় ইসরাইল থেকে জিম্মি হওয়া বন্দিদের মধ্যে বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের চেয়ে তিনগুণ বেশি ফিলিস্তিনি ইসরাইলের কারাগার থেকে ছাড়া পায়। পরে যুদ্ধবিরতি শেষে ফের ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী।

গাজায় ইসরাইলি অভিযানের শততম দিনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া দখলদার বাহিনীর হামলায় ১০০ দিনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৪ হাজার ৫৫ জন ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। নিহতদের মধ্যে গাজায় ২৩ হাজার ৭০৮ জন এবং পশ্চিম তীরে ৩৪৭ জন রয়েছেন। অপরদিকে ইসরাইলে ১৩ শ’র বেশি প্রাণ হারিয়েছে।

এই সময়ে আহত হয়েছেন ৬৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে গাজায় ৬০ হাজার ৫ এবং পশ্চিম তীরে ৪ হাজারের বেশি। বিপরীতে ইসরাইলে আহত হয়েছে ১২ হাজার ৪১৫। পাশাপাশি নিখোঁজ রয়েছেন কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি। ধারণা করা হয়, হামলার ঘটনায় তারা বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকতে পারেন। অভিযানে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি ইসরাইলি সেনা আহত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ১০০ দিনের হামলায় গাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে ৪৫-৫৬ শতাংশ। গাজার হাসপাতাল আংশিকভাবে কাজ করছে ৩৬টির মধ্যে মাত্র ১৫টি।

৫ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধা ও অনাহারের’ সম্মুখীন হয়েছে। গাজায় স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ শতাংশের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদের সংখ্যা ১৪২টি। ক্ষতিগ্রস্ত গীর্জার সংখ্যা ৩টি। ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্স ১২১টি। সোয়া ৬ লাখ স্কুল শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

আল জাজিরা আরও জানিয়েছে, গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৮ লাখের বেশি। এছাড়া পশ্চিম তীরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১ হাজার ২০৮ ফিলিস্তিনি। অপরদিকে উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্ত এলাকা থেকে আড়াই লাখের মতো ইসরাইলি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি হয় ২৫০ জন। এর মধ্যে ১২১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। হামাসের কাছে বন্দী থাকা অবস্থায় ইসরাইলি হামলায় ৩৩ জন বন্দী মারা গেছে। বর্তমানে হামাসের কাছে ১৩৬ জন জিম্মি আছে। অপরদিকে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল।

উল্লিখিত সময়ে গাজায় ২৯ হাজার বোমা, গোলাবারুদ এবং শেল ফেলা হয়েছে। আর ইসরাইলের দিকে রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ হাজার।

যুদ্ধের শততম দিনে গাজার রাফাহ কুয়েতি হাসপাতালের চিকিৎসক সুহাইব আল-হামস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ১০০ দিন কীভাবে কেটে গেল? গাজাবাসী এই সময়গুলো তিক্ততার সঙ্গে, শহীদদের সঙ্গে, আহতদের নিয়ে সময় পার করেছে। তারা বেদনা, নিষ্ঠুরতা এবং দুঃখের দৃশ্য নিয়ে পার করেছে।’

তার কথায়, ‘শুধু বাড়িঘরই নয়, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলেরও ধ্বংস প্রত্যক্ষ করেছি। ইসরাইল বোমা হামলা করেছে হাসপাতাল, রাস্তা, মেডিকেল দল বা অ্যাম্বুলেন্স সবকিছুর ওপর। তারা কোনো কিছু বাদ দেয়নি।’

এদিকে যুদ্ধের ১০০তম দিনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুমকি দিয়ে বলেছেন, আমাদের অভিযান কেউ বন্ধ করতে পারবে না।

শনিবার এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলকে বিজয় অর্জন থেকে কেউ বাধা দিতে পারবে না। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যা করা প্রয়োজন, তা করব।

অপরদিকে গাজা যুদ্ধের শততম দিন উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৩০টি দেশে গতকাল শনিবার হাজার হাজার ফিলিস্তিন-সমর্থক বিক্ষোভ করেছেন। গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে ডাক দেওয়া ‘গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশন’-এর (বৈশ্বিক বিক্ষোভের দিন) অংশ হিসেবে রাজপথে নেমে তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দাবি জানান।

গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের জোটের পক্ষ থেকে গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশনের ডাক দেওয়া হয়। এতে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, যুক্তরাজ্যের লন্ডনসহ বিশ্বের ৩০টি দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল শনিবার ছিল ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ৯৯তম দিন। এদিন এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।