বার্তা পরিবেশক :
উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নে অসহায় এক শিক্ষক পরিবারের জায়গা দখল করে বাগানের গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে পাগলির বিল ছায়াখলা এলাকার বাসিন্দা মো. রুবেলের বিরুদ্ধে। ওই বাগানের ভূমি নিজেদের দখলে দাবি করে স্থানীয় বিচার ও আইন অমান্য করে প্রায় তিনশো গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ভূমির দখল নিতে ও গাছ কেটে লুট করতে ভাড়াটে বাহিনী ও নিজেরা মিলে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দফায় দফায় গাছপালা কাটতে থাকে। এতে সেখানে বসবাসকারী স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের বাঁধা দিলে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি প্রদান করে। এতে ভুক্তভোগী পরিবার দূর্বল হওয়ায় তারা দিনের পর দিন সুযোগ নিয়ে যাচ্ছে ।
জানা যায়, পূর্ব মরিচ্যা এলাকার ধেছুয়াপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃত মাওলানা উজির আলির ওয়ারিশরা ২৫/৩০ বছর আগে থেকে ওই জমিতে বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও মূল্যবান আকাশমণি গাছ রোপন করে। যা রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিপক্ষ অবস্থায় ছিলো। কিন্তু গত ৬/৭ মাস ধরে পাগলির বিল ছায়াখোলার এলাকার আমির হোসাইনের ছেলে চিহ্নিত মাদক কারবারি ও অপকর্মের হোতা রুবেল ও তার পরিবারের অপরাপর সদস্যরা আকস্মিক ওই জমি নিজেদের দাবী করে স্থানীয় প্রভাবশালীর ইন্ধনে জোরপূর্বক ওই জায়গা দখল করে বাসা নির্মাণ করে ও সেখানকার গাছপালা ধাপে ধাপে কেটে উজাড় ও বাগানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা করে যাচ্ছে। এতে বাধা প্রদান করার চেষ্টা করলে ভুক্তভোগীদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছেন রুবেল ও তার পরিবার। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শালিশকারকদের দ্বারেদ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে অসহায় জীবন-যাপন করছেন ওই শিক্ষক পরিবার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় নজু মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি জায়গাটা ক্রয় করে উজির আলী ও তার ছেলেরা বাগান করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিন রুবেল নামে একজনকে বিক্রি করে দেয়। পরে তারা সেটি দখলে নিয়ে সেখানে গাছপালা কেটে ফেলছে এবং বাসা নির্মাণ করছে। এতে মূল মালিক পক্ষ বাঁধা দিতে আসলে তাদেরকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি দিয়ে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে। যা খুবই নিন্দনীয়। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়টি আমলে নিয়ে সমাধান করে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের জিয়াউর রহমান জানান, ক্রয়সূত্রে ৭৮৯ নং খতিয়ানের ১৮৫৭ নং দাগের ২ একর ৭৬ শতক জমি আমাদের। সেখান থেকে ১ একর ১৫ শতক জায়গা তারা জোরপূর্বক দখলে নিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে আমাদের ৩ জন ভাড়াটিয়াও রয়েছে। পাশাপাশি পানের বরজ ও ক্ষেত খামারের চাষ করতে চাষিদের বর্গাও দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে আমি হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য এম. মনজুর আলম ও বোরহান উদ্দিনকে কে সুরাহা করার নির্দেশ দিলে তারা বৈঠকের আয়োজন করলেও তারা সেটি গুরুত্ব দেয়নি। পরে তারা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমের কাছে বৈঠকে বসবে বললে আমরা সেটা মেনে নিয়ে রাজি হলেও তারা কালক্ষেপণ শুরু করে। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান শাহ আলম অপারগতা স্বীকার করে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। এতে আমরা উপায়ন্তর না দেখে কক্সবাজার আদালতে একটি মামলা দায়ের করি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রুবেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং দখলকৃত জায়গাটি তাদের নিজেদের দাবী করলেও এ নিয়ে কোনো দলিলপত্র বা কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। উল্টো সংবাদ সংগ্রহ করার সময় বাধাপ্রদান এবং সংগ্রহকৃত ভিডিও কেটে ফেলার জন্য জিম্মি করে রেখে হুমকিও প্রদান করেন।
এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য এম মনজুর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার কাছে বিচারাধীন আছে। কিন্তু রুবেল ও তার পরিবারের লোকজন মাদক ব্যবসার কালো টাকা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একটি শিক্ষক পরিবারের উপর অন্যায় করে যাচ্ছে। স্থানীয় বিচার মানবে বললেও তারা সেটা মানছে না। তাই প্রশাসনের প্রতি আকুল আবেদন বিষয়টি সরেজমিনে এসে তদন্ত করে একটি সুষ্ঠু সমাধান করে দেওয়ার জন্য। অন্যথায় এ নিয়ে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এদিকে, স্থানীয় সচেতন মহল এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকার জন্য বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে যার জায়গা তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-