কক্সবাজার প্রতিনিধি :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ৭ জানুয়ারি। হাতে মাত্র ১৪ দিন বাকি থাকলেও কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের ভোটের সমীকরণ বদলে গেছে। উচ্চ আদালতের আদেশে এই ২টি আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত দুই নেতা। যারা ঈগল প্রতীক নিয়ে ফিরেছেন নির্বাচনী মাঠে।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) তারা উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আদেশ মতে নির্বাচন কমিশনার প্রতীকও বরাদ্দ প্রদান করেছেন। দুই জনই ঈগল প্রতীক পেয়েছেন। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
উচ্চ আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন কক্সবাজার-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও হাইকোর্টের আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ এবং কক্সবাজার-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর।
এরমধ্যে কক্সবাজার-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের করতে যান। কিন্তু বিকাল ৫টা অতিক্রম হওয়ায় বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের আপত্তির প্রেক্ষিতে মনোনয়নপত্রটি গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে যান ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। আদালত মনোনয়নপত্র দখলের জন্য আদেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় অতিবাহিত হওয়ার ১১ দিন পর গত ১২ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার মিজান সাঈদের মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করে ছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে ১৫ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইকালে কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান সমর্থন ভোটারদের এক শতাংশ স্বাক্ষরে গড়মিল ও সংশ্লিষ্ট ভোটার স্বাক্ষর প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করায় মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেন। এরপর মিজান সাঈদ আবারও আদালতে যান। বৃহস্পতিবার এক আদেশে প্রতীক বরাদ্দ পান তিনি।
একইভাবে কক্সবাজার-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। যাচাই বাছাইকালে ৪ ডিসেম্বর এক শতাংশ ভোটারদের স্বাক্ষরে গড়মিল থাকার কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করেন কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে তিনিও প্রতীক বরাদ্দ পান।
এর প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনের মোট প্রতিদ্ব›দ্বী ২৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার-১ এ ৭ জন, কক্সবাজার-২ এ ৬ জন, কক্সবাজার-৩ এ ৬ জন এবং কক্সবাজার-৪ এ ৭ জন প্রার্থী হল। যেখানে কক্সবাজার-৩ আসনে আগের ৫ জন প্রার্থীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছেন একজন। আগের ৫ প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল (নৌকা), জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) শামীম আহসান ভুলু (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন)।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। যার সঙ্গে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুনের সঙ্গে মূল প্রতিদ্ব›িদ্ব হতো। এখন নতুন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছেন মিজান সাঈদ। যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে নানাভাবে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের গ্রæপিং রাজনীতির সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে মিজান সাঈদকে।
কক্সবাজার-৪ আসনে আগের ৬ জন প্রার্থীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে আরও একজন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন ভুট্টো (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী (মিনার) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব)।
এ আসনে আওয়ামী লীগের শাহীন আক্তারের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। তবে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় বদলে গেলে এই সমীকরণ। টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরের রয়েছে নিজস্ব কর্মী বাহিনী। একই সঙ্গে টানা ১৫ বছরের ক্ষমতায় তৃণমূল কর্মীদের অবমূল্যায়ন ও নানা গ্রæপের কারণে পুরো ভোটার মাঠ বদলে গেছে।
এছাড়া কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম (ট্রাক) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের (হাতঘড়ি) মাঝে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। এ আসনে অপর প্রার্থীরা হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির হোসনে আরা (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি জাফরের ছেলে তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী তুহিন (ঈগল), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুদ্দিন আরমান (কলারছড়ি)। ঋণ খেলাপির অভিযোগে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপির মনোনয়নপত্র বাতিল করায় এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক (নৌকা) অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে। ওই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ইউনুস (মিনার), বিএনএম এর শরীফ বাদশাহ (নোঙ্গর) তিনিও সুবিধাজনক অবস্থান দখলে নিতে পারে, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) মোহাম্মদ খায়রুল আমীন (একতারা), বাংলাদেশ ন্যাশালিস্ট পার্টির (এনপিপি) মাহবুবুল আলম (আম)।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-