রোকসানা সুমি ॥
মাদক দ্রব্যের এক অঘোষিত স্বর্গরাজ্য এখন কক্সবাজার। প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য জব্দ হয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। কিম্তু চলতি বছর বেশ কয়েকবার জব্দ হয়েছে প্রচলিত ইয়াবার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি ক্ষতিকর মাদক আইস।
অনেক সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে আরও বেশী পরিমাণ মাদক ঢুকে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব মাদকের কারণে ধ্বংস হচ্ছে দেশের যুব সমাজ। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।
আইসের বাণিজ্যিক নাম ক্রিস্টাল মিথাইল এমফিটামিন। যা অবৈধ পথে বাংলাদেশে আনার পর কয়েকটি চক্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের আনাচে-কানাচে ।প্রচলিত ইয়াবাতে এমফিটামিন থাকে পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আর ক্রিস্টাল ম্যাথ বা আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। তাই এটি ইয়াবার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিকারক মাদক। সেবনের পর দ্রুত ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মানবদেহে।
বর্তমানে ড্রাগ অপব্যবহার এবং ড্রাগ আসক্তি বিশ্বে একটি ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে রূপ নিয়েছে। তাছাড়া অনিদ্রা, অতিরিক্ত উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম ও হূদেরাগকে বেগবান করে।
ভয়ানক আইস চোরাচালানকারীদের মুল টার্গেট থাকে উচ্চবিত্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা৷ মস্তিষ্ক ধ্বংসকারী এই মাদক একটি পুরো প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিতে যথেষ্ট বলে জানান কক্সবাজার সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হামিদা তাহের।
তিনি বলেন ” এটি খুবই দুঃখজনক বিষয়। অভিভাবক হিসেবেও আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত দেখতে চাই। অন্যথায় আমরা হুমকির সম্মুখীন হব। আমাদের তরুণ প্রজন্ম বিপথে চলে যাবে।
কক্সবাজার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নজিবুল ইসলাম বলেন, “বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য এখানে ধরা পড়ছে এবং বেশ কিছুদিন ধরে আইসের মত মারাত্মক একটি মাদকদ্রব্যের বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। এটি নিয়ে আমরা আগেও যেমন শঙ্কিত ছিলাম এখনো শঙ্কিত আছি। ”
চলতি বছরই বেশ কিছু আইস চোরাচালানকারী ধরা পড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। যদিও রেকর্ড ভেঙেছে বিগত ৭ মে রযা্ ব কর্তৃক সর্ববৃহৎ ২৪ কেজি, যার বাজার মুল্য ১২০ কোটি টাকার আইস জব্দের মাধ্যমে।
সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফ মহাসড়কের রামু- মরিচ্যা যৌথ চেকপোস্টে লবণ বোঝাই একটি ট্রাকে তল্লাশি চালিয়ে ১৮কেজি ২০ গ্রাম ভয়াল মাদক ক্রিস্টাল ম্যাথ আইস উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। যার আনুমানিক বাজার মুল্য ৯০ কোটি টাকা।
ব্যায়বহুল ও ভয়ঙ্কর এই মাদক নারায়ণগঞ্জে পাচারের পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করেন বলে জানান রামু ৩০ ব্যাটালিয়ন বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান তানজিদ।
তিনি আরও বলেন – “আমরা অবশ্যই মূলহোতাদের চিহ্নিত করছি। আমাদের দেশের ভিতর এই ধরনের মাদকের ব্যাপ্তি না ঘটাতে পারে, আমরা এ ব্যপারে সচেষ্ট রয়েছি। ”
মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে হুমকির মুখে পড়বে যুব সমাজ। যে কোন উপায়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে জানান কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান। তিনি বলেন, ” মরণ মাদক আইস ক্রমশ যুব সমাজকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে। আমি মনে করি এ বিষয়ে আমাদের বিজিবি, কোস্টগার্ড , পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সকলের যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকে বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন।
জাতিকে ধ্বংস করার জন্য মিয়ানমার থেকে মাদক পাচার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে বলে জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ।
মরণঘাতি মাদক আইস যে পরিমাণ জব্দ করা হয়েছে তার হিসাব আছে কিন্তু যে সব মাদক অগোচরে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে তার পরিসংখ্যান জানা নেই কারও।
সর্বোচ্চ মরণ মাদক আইস বহনকারী ও সেবনকারী ধরা পড়লেও নেপথ্যে রয়ে যাচ্ছে মূল হোতারা। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা আইস। এই সীমান্ত পাহারা কঠোর হলে কোন ধরণের মাদক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনটি জানান সচেতন মহল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-