ফের বেপরোয়া মাদক কারবারি মাজেদ: মামলা থেকে নাম বাদ দিতে দৌড়ঝাপ

আবদুল্লাহ আল আজিজ, কক্সবাজার জার্নাল :

মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন হিসেবে পরিচিত উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া মোনাফ মার্কেট এলাকার আবুল সামার ছেলে আবদুল মাজেদ ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বলতে গেলে ওই ইউনিয়নে মাদকের এক গুচ্ছ নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। ভালো মানুষের মুখোশ পরে দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের ব্যবসা।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অস্ত্র চোরাচালান, জুয়া এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক নারী ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। সে এইসব ব্যবসা করে রাতারাতিই বনে গেছে টাকার কুমির। এসব দেখে সচেতন মহল হতাশ হয়ে পড়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আবদুল মাজেদ সমুদ্রপথে ইয়াবা কারবার ও মানবপাচার করে এখন কোটিপতি। সে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা কারবার করে আসলেও রয়েছে বহাল তবিয়তে। তবে তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানা সহ বিভিন্ন থানায় বহু মামলা রয়েছে। এর পরেও তার অপকর্ম বন্ধ হয়নি। বরং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের করা ইয়াবা উদ্ধার মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) থেকে তার নাম বাদ দেয়ার তদবির চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১১ ডিসেম্বর (সোমবার) সকাল ৮টার দিকে সোনারপাড়া এলাকার ছালামত উল্লাহ প্রকাশ বাসুর বাড়ি থেকে ২২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে র‍্যাব। এসময় মাজেদ সিন্ডিকেটের অন্যতম কারবারি রুবেল আটক হলেও সুকৌশলে পালিয়ে যায় বাড়ির মালিক বাসু ও তার স্ত্রী নুর নাহার বেগম এবং আবদুল মাজেদ।

ওই ঘটনায় উখিয়া থানায় র‌্যাবের দায়ের করা ওই মামলায় ৪নং আসামী আবদুল মাজেদ। এই মামলাটি তদন্ত করছে উখিয়া থানার পুলিশ।

অভিযোগ উঠেছে, ওই মামলা থেকে নাম বাদ দিতে মোটা অংকের টাকার মিশনে নেমেছে মাজেদ। তবে এখনো সফল হতে পারেনি সে।

সূত্র জানান, আবদুল মাজেদের রয়েছে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারী দল। তারাই টেকনাফ ও উখিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা এবং সমুদ্রপথে থেকে বিপুল সংখ্যক মাদক প্রবেশ করায়। পরবর্তীতে মাজেদ মাদকগুলো তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পাইকারি ও খুঁচরা ব্যবসায়ীদের হাতে সুকৌশলে পৌঁছে দেন। মাদকগুলো বহন করার কাজে বিলাসী চাহিদা সম্পন্ন উঠতি বয়সী যুবক-যুবতী, এনজিও কর্মী ও বেকারদের সহ কমপক্ষে শতাধিক লোকজনকে তার এই কাজে সহযোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ওই পাচারকারী দলের কেউ আটক হলেও বরাবরেই অধরা থেকে যান আবদুল মাজেদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবদুল মাজেদের পিতা আবুল সামা বোটের মাঝি হওয়ার সুবাধে সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন মাজেদ। সেসময়ে সমুদ্র এলাকা থেকে মাছ ও জাল ডাকাতি করতেন। যার কারণে স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিলেন জাল ও মাছ ডাকাত হিসেবে। পরবর্তীতে তারই আপন ভাই গুরু মাঝির হাত ধরে ইয়াবা কারবার করে রাতারাতি ভাগ্য বদলান তিনি। কয়েক বছরের মাথায় ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে জমি কেনা শুরু করেন। রাতারাতি টাকার মালিক হওয়ায় পরবর্তীতে ওঠাবসা ছিল অনেক প্রভাবশালীদের সাথে এবং তাদের সাথে বসে জুয়া ও নারীর আসরে থাকেন নিয়মিত। তারই আপন আরেক বোন হামিদার নামেও ইয়াবা কারবারের অভিযোগ রয়েছে।

একজন চিহ্নিত মাদক কারবারী কিভাবে বীরদর্পে চলাফেলা করে তা নিয়ে উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তাই নানা অপরাধে একাধিক মামলার আসামি এমন একজন চি‎হ্নিত রাষ্ট্রদ্রোহী, চোরাকারবারী আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

আরও খবর