বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের ঝিংলজায় অবস্থিত আইকনিক রেল স্টেশনে টিকেট কাউন্টারের সামনে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৮ টার আগেই ভীড় করছিলেন কিছু সংখ্যক মানুষ। পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা মতে আগামি ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামি কক্সবাজার এক্সপ্রেসের কোন টিকেট খালি নেই। বুধবার সকালে বিক্রি হবে ২৩ ডিসেম্বরের টিকেট।
কিন্তু না ২৩ ডিসেম্বরের কোন টিকেটও পাওয়া যায়নি। সকাল ৮ টার পর পর কাউন্টারে এসে সংশ্লিষ্টরা জানিয়ে ছিলেন সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। আর ৮ টা ২ টি রেলওয়ের অনলাইন টিকেট বিক্রির অ্যাপে দেখা যায় যেখানেও সব টিকেট বিক্রি দেখানো হয়েছে।
টিকেটের এ পরিস্থিতি শুরু হয়েছে ১ ডিসেম্বর থেকেই। কক্সবাজার থেকে ঢাকা প্রথম যাত্রী নিয়ে রেল চলাচলের পর থেকে এই টিকেটকে নিয়ে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে হৈ-চৈ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে এটা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারে রেলের টিকেট শতভাগ কালোবাজারী সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। আর অতিরিক্ত দেড় থেকে ২ শত টাকা দেয়া হলেই মিলছে টিকেট।
যার সূত্র ধরে প্রতিবেদক গত ৬ ডিসেম্বর থেকে টানা এ সপ্তাহ ধরে এই টিকেট নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। যেখানে প্রতিদিনই কাউন্টারে গিয়ে মিলেনি কোন টিকেট আর অনলাইনেও ৮ টা ১ বা ২ মিনিটের মধ্যে উধাও হয়ে যায় সব টিকেট।
কিন্তু কোন টিকেট কাউন্টারে বা অনলাইনে পাওয়া না গেলেও গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজার থেকে ট্রেন যোগে স্বপরিবারে ঢাকা গেছেন কক্সবাজারের ঘোনারপাড়া এলাকার এক ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীর ভাই সংবাদ মাধ্যম ইউএনবি কক্সবাজারের প্রতিনিধি দীপক র্শমা দীপু।
দীপক র্শমা দীপু জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রেন যাত্রা দেয়ার আগে তার ভাই, ভাবী ও ২ সন্তান সহ স্টেশনে যান। যেখানে টিকেটের জন্য কয়েকজনকে আকুতি জানানোর পর একজন ৪ টা টিকেটে ২ শত টাকা করে বেশি দিলে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। ভাই তার শর্তে রাজী হলে লোকটি স্টেশনের ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ২ টি টিকেট নিয়ে ফেরত আসেন। ওই টিকেটে করেই ৪ জন ঢাকা গিয়েছিলেন।
এই লোকটির পরিচয় নিশ্চিত না হলে লোকটি স্টেশন সংশ্লিষ্ট বলে ধারণা করেন সাংবাদিক দীপক র্শমা।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে আইকনিক স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় যাত্রীরা ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। সাড়ে ১২ টার ট্রেনে এসব যাত্রীরা যাবেন ঢাকায়। যাদের আগে থেকেই টিকেট করা ছিলো তারা সানন্দে অপেক্ষা করছে স্টেশনে। তবে কাউন্টারে টিকেট নেই ঝুলানো নোটিশ দেখে বিরক্তভাবে এদিক সেদিক ঘুরছে অসংখ্য যাত্রী। টিকেট পেতে দায়িত্বরত অনেকের সাথে কথা বলছেন তারা। ফিরেও যাচ্ছেন অনেকে। টিকেট না পাওয়া এমন যাত্রীদের টার্গেট করছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েকজন সদস্য। টার্গেটের গা ঘেঁষে কথা বলছেন তারা। কথা শেষে আইকনিক স্টেশনের ভিতরে যাচ্ছেন একটুখানি পর ফিরে এসে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন রেলের টিকেট। রেল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে টিকেট এনে দিচ্ছেন নিরাপত্তা কর্মীরা।
টিকেট নেয়া যাত্রী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, এক লোক থেকে ৪টি টিকেট সংগ্রহ করেছি। এক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ওই লোকের কাছে নিয়ে গেছে। ২৭ শ টাকা দিয়ে এই টিকেটগুলো কিনেছি। শুধু মামুন নয় কথা হয় ছুটিতে বাড়ি যাওয়া রেলস্টেশনে অপেক্ষারত দুইজন সৈনিকের সাথে। তারাও জানান, বাড়তি দাম দিলে টিকেট দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন ওই আরএনবি সদস্য।
এবার যাত্রী সেজে কথা হয় কালোবাজারি সিন্ডিকেটের সদস্য হেলাল নামের ওই আরএনবি সদস্যের সাথে। ঢাকা যাওয়ার ি কেট চাইলে প্রতিবেদককেও ২ টি টিকেট ২২ শ টাকা দিয়ে বিক্রির প্রস্তাব দেন তিনি।
টিকেটের বিষয়ে গত ৯ ডিসেম্বর কথা হয় কাউন্টারের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হাসিবুলের সাথে। তিনি বলেন, প্রতিদিন অতিরিক্ত ১ হাজারের বেশি যাত্রী আসে। ১৯ তারিখ বন্ধ। ২০ তারিখের টিকেট পাওয়া যাবে রবিবার ১০ ডিসেম্বর।
কিন্তু ১০ ডিসেম্বর গিয়েও পাওয়া যায়নি ২০ ডিসেম্বরের সেই টিকেট। আর এর মধ্যে সিন্ডিকেট প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজ, গ্রæপ এবং হোয়াটস অ্যাপে গ্রæপ করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন টিকেট। ‘ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন’ ‘কক্সবাজার ঢাকা কক্সবাজার ট্রেন টিকেট ক্রয় বিক্রয় গ্রæপ’ ‘ট্রেন টিকিট বাংলাদেশ রেলওয়ে’ নামে ফেসবুকে কয়েকটি পেইজ ও গ্রপে চক্রটিকে সক্রিয় দেখা গেছে।
যেখানেও অতিরিক্ত টাকা দিলে মিলে ট্রেনের টিকেট।
কিন্তু এই টিকেট নেপথ্যের কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের মাস্টার মো. গোলাম রব্বান। তিনি বলেছেন, কালোবজারে টিকেট যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ট্রেনের টিকেট মুলত শতভাগই অনলাইনে নিয়ন্ত্রিত। যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় ঢাকা থেকে। ১০ দিন আগের টিকেট সকাল ৮ টায় অনলাইনে আসে। কিন্তু এ টিকেট কাটার জন্য প্রতিদিন সকঅল ৮ টায় লাখের বেশি মানুষ চেষ্টা করে। এক হাজার ১০ টি সিট। একজন তার এনআইডির বিপরীতে ৪ টা করে টিকেট কাটতে পারেন। ফলে অনেকেই টিকেট পাচ্ছেন অনেকেই পাচ্ছেন না। কাউন্টারেও একই অবস্থা। কোন কারণে কেউ টিকেট ছেড়ে দিলে তা কাউন্টারে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।
তবে এক্ষেত্রে টিকেট কেটে অনেকেই না গিয়ে অন্যজনকে বিক্রি করছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে একজনের এনআইডির বিপরীতে অন্যজন ভ্রমনের বিষয় দেখা গেছে। এর জন্য ট্রেন কর্তৃপক্ষ জরিমানাও আদায় করেছেন।
তিনি কক্সবাজার ট্রেন যাত্রীদের অন্যের এনআইডির বিপরীতে টিকেট না নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, জানুয়ারি থেকে আরও একটি ট্রেন আসছে। এটা শুরু হলে যাত্রীর
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-