নিজস্ব প্রতিবেদক •
জেলা ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক টমটমের ভাড়া রাতারাতি দ্বিগুনের বেশি বাড়ানো হয়েছে মর্মে একটি সংবাদে জেলাব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ।
গতকাল কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে টমটমযোগে চড়ে দেখা গেছে টমটমের ভাড়া কোথাও বাড়েনি। শুধুমাত্র কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা টমটমের ভাড়া বেড়েছে । গতকাল লিংক রোড থেকে শহরের পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত আসা যাত্রীরা পূর্বের ভাড়াতেই যাতায়াত করেন।
সমিতি পাড়া থেকে আসা টমটম পূর্বের মত জনপ্রতি ১৫ টাকায় পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত এসেছে।
এব্যাপারে টমটম গ্যারেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইরফান জানান, কোথাও টমটমের ভাড়া বাড়েনি। পূর্বের ভাড়াতেই টমটম চলছে। ড্রাইভাররা বাড়তি কোন ভাড়া চায়নি। যাত্রীদেরও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়নি।
চলমান বির্তকের মধ্যে জেলা ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী পিপিএম তার ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন।
স্ট্যাটাসটি হুবূহু তুলে ধরা হলো :
মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী পিপিএম এর ফেসবুক স্ট্যাটাসঃ ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার থেকে ঢাকা বানিজ্যিক ভাবে বহুল প্রতীক্ষিত ট্রেন যোগাযোগ শুরু হয়েছে। ১হাজার বিশ জন যাত্রী নিয়ে “কক্সবাজার এক্সপ্রেস” আজ ভোর আনিমানিক ০৭:৪৫ এ কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে থামে।
সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ট্রেনের প্রথম যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানান। যেহেতু ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্ব জেলা পুলিশের উপর বর্তায়, তাই ট্রাফিক বিভাগ, জেলা পুলিশ কক্সবাজার ট্রেন যাত্রীদের বিশেষ করে পর্যটকদের রেলওয়ে স্টেশন থেকে কক্সবাজার শহর কিংবা হোটেল-মোটেল জোন পর্যন্ত যাতায়াতকে নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত করার তাগিদ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে।
তারই অংশ হিসেবে পর্যটক হয়রানি রোধে ইজিবাইক(টমটম) চালকদের ভাড়া নির্ধারণ করার উদ্যোগ করা হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায় পার্কিং এরিয়া সম্পূর্ণ তৈরী হয় নি, তাই স্টেশনে গাড়ি প্রবেশে নির্মাণকারী সংস্থা অপারগতা প্রকাশ করে। যাত্রী বা পর্যটকদের সম্ভাব্য দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ট্রাফিক পুলিশ ১০০টমটম প্রবেশের অনুরোধ জানায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও নির্মাণকারী সংস্থাও তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। সেই অনুযায়ী কক্সবাজার শহরে যারা নিয়মিত টমটম চালক তাদেরকে যাচাই বাছাই করে ১৩০জন চালককে তালিকাভুক্ত করে তাদের গাড়িতে আলাদা স্টিকার দেয়া হয়(ট্রাফিক বিভাগের খরচে) এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় পর্যটন-বান্ধব নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। ভাড়া নির্ধারণে শ্রমিক-মালিক সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা করা হয়। এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারের মতামত নেয়া হয়েছে।
যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে যাত্রীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আপাতত বেশি মনে হতে পারে। আবার চালকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কমও মনে হতে পারে। কারণ চালকদের দাবি ভাড়া আরও বেশি হওয়া উচিত।
ভাড়ার কয়েকটি যৌক্তিকতা তুলে ধরিঃ
*রেলওয়ে স্টেশন থেকে শহরের যেকোন হোটেল রিজার্ভ ২০০টাকা। জনপ্রতি ৫০টাকা। এখানে পার্কিং চার্জ অন্তর্ভুক্ত।
* সাধারণত ট্রেন থামবে ভোর ০৬ঃ৪০ ঘটিকায়। যারা ট্রেন যাত্রীর ভাড়া নিবেন তারা ভোরে ঘুম থেকে উঠে চার্জিং স্টেশন থেকে খালি গাড়ি নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে কমপক্ষে ২০-৩০মিনিট অপেক্ষা করে একটি ভাড়া নিয়ে হোটেল/শহরে আসবেন। ভাড়া ২০০টা। ট্রেন দেরী হলে অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হবে। আজকে চালকরা ১ঘন্টার বেশি অপেক্ষা করছে।
*আপনি কি জানেন একটি টমটম চালকের গাড়ির প্রতি দৈনিক খরচ কত? গাড়ি ভাড়া+পৌরসভার নিবন্ধন প্লেটের ভাড়া+চার্জিং খরচ মিলে প্রায় ৯০০টাকা। সকালে একজন চালক এই ৯০০টাকার বোঝা মাথায় নিয়ে রাস্তায় নামে। অবরোধের কারণে পর্যটকদের সংখ্যা কম। তাই তারা যেদিকে একটি ভাড়া পাবার সম্ভাবনা সেদিকে হন্য হয়ে ছুটে যায়। বাজারঘাটা এলাকায় হরতাল-অবরোধের মধ্যে যানজটের মূল কারণ এটি।
*কক্সবাজার পৌরসভা এলাকা সর্বোচ্চ ১হাজার টমটম ধারণের সক্ষমতা রাখে। এখানে পৌরসভার নিবন্ধিত টমটমের সংখ্যা ৩ হাজার। পৃথিবীর সব শহরে মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে। আর কক্সবাজার শহরে গাড়ি মানুষের জন্য অপেক্ষা করে। শুধু সায়মন হোটেলের সামনে ৩০টা, ওশান প্যারাডাইসের সামনে ১৫টা, লং বীচ, সী গাল প্রায় সব হোটেলের সামনে টমটম চালকেরা অপেক্ষা করে একটি যাত্রীর প্রতীক্ষায়।
* বর্তমান পরিস্থিতিতে সারাদিন গাড়ি চালিয়ে টমটম চালকরা গাড়ির খরচ মিটাতে পারছে না। বড়জোর ২০০-৩০০টাকা পকেটে নিয়ে বাড়ি যেতে পারছে না। অনেক চালকরা ভাড়া মিটাতে পারছে না বলেই লাইসেন্স মালিকরা লাইসেন্স নিয়ে নিচ্ছে। এমন অভিযোগ প্রতিনিয়ত শুনতে হচ্ছে।
এই বার একটি বাস্তব উদাহরণ দিব: ডলফিন মোড় থেকে হোটেল-মোটেল জোন পর্যন্ত পৌরসভার কর্তৃক নির্ধারিত রিজার্ভ ভাড়া ৫০টাকা। সকালে বাস থেকে যে সকল পর্যটক ডলফিন মোড়ে নামেন, তাদের কাছ থেকে টমটম চালকরা ভাড়া নেয় ১৫০টাকা। এটি সিন্ডিকেট ভাড়া। এই ভাড়া নির্ধারণ ট্রাফিক পুলিশ করে নি। ভাড়া বাস্তবায়নের দায়িত্বও ট্রাফিক পুলিশের নয়।
জ্বি। আমরা মাঝে মাঝে দায়িত্বের বাহিরে গিয়েও দায়িত্বশীলতা নিয়ে কাজ করি। তাই আমরা কক্সবাজার শহরে পর্যটন সংশ্লিষ্ট যানবাহন গুলোর স্মার্ট ডাটাবেজ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রবর্তিত নতুন জাতীয় পুরস্কার “স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২৩” অর্জনের সৌভাগ্যও আমাদের হয়েছিল। এই কক্সবাজারে কাজ করে।
পরিশেষে বলব, আপনাদের সমালোচনা আমাদেরকে পরিশীলিত করবে, পরিশুদ্ধ করবে, পরিমার্জিত করবে। তাই আমরা আমাদের কার্যক্রম নিয়ে যেকোন আলোচনা সমালোচনাকে ইতিবাচক ভাবে দেখি।
আমি প্রজাতন্ত্রের নগণ্য একজন কর্মচারী। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মোটেও কেউ নই। বহুল প্রতীক্ষিত রেল যোগাযোগের শুরুটা যেন নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও হয়রানিমুক্ত হয় তাই একটি সিদ্ধান্ত দেয়া প্রয়োজন হয়েছিল বিধায় আমি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত না দিলে যে হ-য-ব-র-ল হত এবং পর্যটক হয়রানি হত তা কারো জন্য শুভকর হতো না। তাই এই বিষয়ে জেলার নীতিনির্ধারণী মহল যে সিদ্ধান্ত নিবে তা আমরা আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে বাস্তবায়ন করব। ইনশাআল্লাহ ।
- মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী, পিপিএম
- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক)
কক্সবাজার জেলা
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-