রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝি হত্যা: মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতার

আবদুল্লাহ আল আজিজ, কক্সবাজার জার্নাল :

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাবেক হেড মাঝি আতাউল্লাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে এজাহারনামীয় অন্যতম আসামী আহসান উল্লাহকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫।

২৭ নভেম্বর (সোমবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কক্সবাজার সদরের দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামি আহসান উল্লাহ ১৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক এ/৮ এর কাদের হোসেনের ছেলে। নিহত সাবেক হেড মাঝি আতাউল্লাহ একই ক্যাম্পের এ/১ ব্লকের বাসিন্দা এবং ওই ব্লকের সাব মাঝি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, গত ২৫ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে পালংখালীর ঘোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৯ এ আতাউল্লাহ নামে একজনকে আরসার সদস্যরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে এবং নির্মম এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একই সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও হত্যার সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে ব্যাপক সমালোচনা ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরবর্তীতে নিহত আতাউল্লাহর ছেলে বাদী হয়ে এজাহানামীয় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ৭৫/৬৯৫ তাং ২৬/১১/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪, পেনাল কোড ১৮৬০।

বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত হওয়ার পরপরই র‌্যাব-১৫ এর চৌকস আভিযানিক দল ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে।

তারই ধারাবাহিকতায় মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে এজাহারনামীয় অন্যতম আসামী আহসান উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আহসান উল্লাহ’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বছর খানেক আগে আতাউল্লাহকে সরিয়ে দিয়ে সোনা মিয়া নামক এক রোহিঙ্গাকে ক্যাম্প-১৯ এর এ ব্লকের হেড মাঝি এবং আতাউল্লাহকে ব্লক-এ/১ এর সাব মাঝি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তী হেড মাঝি সোনা মিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি গোলাগুলির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বর্তমানে কারাবরণ করছে। হেড মাঝি সোনা মিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর ক্যাম্প-১৯, ব্লক-এ এর হেড মাঝি হওয়ার জন্য আতাউল্লাহ’সহ আরো অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বীতা শুরু করে। এ নিয়ে আতাউল্লাহ’র সাথে কয়েকজনের শত্রুতা তৈরী হয়, যারা আরসার সাথে একটি সু-সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে। তাছাড়া গত দুই মাসে এপিবিএন পুলিশ কর্তৃক আরসার দুইজন অন্যতম সন্ত্রাসী হাতকাটা ফয়সাল এবং খাইরুল আমিন গ্রেফতার হওয়ায় আরসা সদস্যরা সন্দেহ পোষণ করছিল যে, আতাউল্লাহ এপিবিএন পুলিশকে আরসা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করছে এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে এই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এই সুবাদে আতাউল্লাহ’র প্রতিদ্বন্দ্বীরা আরসার সাথে যোগসাজশে তাকে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত আসামী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৯ এর এ/৮ ব্লকের ভলান্টিয়ার মাঝি আহসান উল্লাহ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আতাউল্লাহ’কে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গা সদস্যের সাথে আলোচনা করার জন্য ক্যাম্প-১৯ এর এ/৯ ব্লকের মোহাম্মদ ইয়াছিনের পান-সিগারেটের দোকানের সামনে আসার জন্য বলে। আতাউল্লাহ দোকানের সামনে পৌঁছা মাত্রই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ৮/৯ জন আরসার সদস্য দেশীয় ধারালো রামদা ও ছোরা দিয়ে আতাউল্লাহকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

আরও খবর