উখিয়া-টেকনাফের নৌকার মাঝি কি শফিউল আলম!

ইমরান আল মাহমুদ, কক্সবাজার জার্নাল :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪( উখিয়া-টেকনাফ) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক(সাবেক) মোহাম্মদ শফিউল আলম।

তবে ফরম পূরণ করেছেন অনলাইনে ও জমা দিয়েছেন একই প্রক্রিয়ায়। খবরটি শুনার পরপরই উখিয়া ও টেকনাফের মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা বাজার ও পাতাবাড়ি বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে পৃথক আনন্দ মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ। মিছিলে বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়।

এদিকে,সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের মনোনয়ন জমার বিষয়টি উখিয়া-টেকনাফের নতুন মেরুকরণ বলছেন অনেকে। তাদের মতে, বিগতদিনে উখিয়া-টেকনাফ আসনে যে দলের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সে দল-ই ক্ষমতায় এসেছে। সেজন্য লক্ষ্মী আসনটি নিয়ে সবার গভীর দৃষ্টি রয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে নানা আলোচনার জন্ম দেওয়া সাবেক সংসদ আব্দুর রহমান বদি-ই ছিলো সর্বশেষ আলোচনায়। হঠাৎ আলোচনার জন্ম দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের মনোনয়ন জমার বিষয়টি। তবে কি এমপি হতে যাচ্ছেন শফিউল আলম? এমনটি প্রশ্ন সাধারণ মানুষের

তবে উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এখানে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিয়ে আসছে। বিদেশি উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধিদলের নিয়মিত আসা যাওয়া রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে। তাছাড়া মায়ানমার সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন নিয়ে আলোচনা আরও সুদৃঢ় করতে আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া মাদকের আগ্রাসন কমাতে ও গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াতে উচ্চ শিক্ষিত সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক(সাবেক) মোহাম্মদ শফিউল আলম সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

মোহাম্মদ শফিউল আলম ২১তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে টানা চারবছর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাছাড়া তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন মেয়াদ বৃদ্ধি করে তাকে পুনরায় দায়িত্ব প্রদানের নজিরও রয়েছে। যা পূর্বে কখনো হয়নি।

কর্মজীবন:শফিউল আলম ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস(বিসিএস) পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৮৩ সালের ২৭ অক্টোবর সহকারী কমিশনার ও ৩য় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে, ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় রাজউক-এর ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও তিনি চার মাস কাজ করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে যথাক্রমে, মাগুরা ও ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এমডিএস, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এবং বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) অতিরিক্ত সচিব, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব, ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে তিনি বাংলাদেশের ২১তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৩ অক্টোবর ২০১৯ থেকে ৩ বছরের জন্য বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব শেষে তিনি বর্তমানে অবসরে রয়েছেন।

মোহাম্মদ শফিউল আলম ১৯৫৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের রুমখাঁপালং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছৈয়দ হোসাইন ও মাতার নাম আলমাছ খাতুন। পিতা সৈয়দ হোছাইন ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক ও মাতা আলমাস খাতুন একজন গৃহিণী। আট ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। তাঁর বড় ভাই এটিএম জাফর আলম সিএসপি মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রথম সারির শহীদ। ছোটভাই মো. শাহ আলম হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ভাতিজা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান।

আরও খবর