সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা জানান, হাইকোর্টের দেয়া পর্যবেক্ষণসহ ২ বছরের অধিক দন্ডিতদের রায় নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। এ রায়ের ফলে শুধু বিএনপিরই নয়, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও এমপিসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে জানা গেছে।
আইনগত জটিলতার কারনে যারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি। যদি আইনগত জটিলতার কারনে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে গতবারের মতো এবারও তার সুপারিশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। কারন তার সংসদীয় এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে যাকেই দলের মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন তাকেই এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসাবে বিজয় হয়ে আসতে আবদুর রহমান বদির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতা নিতেই হবে। এখন দেখার বিষয় স্ত্রী, শালা ও শশুর কার পক্ষে যাচ্ছেন বদির সুপারিশ বা সমর্থন । এখন কে হচ্ছেন আবদুর রহমান বদির রাজনীতিক কৌশলের কাছে রাজনৈতিক বলিরপাটা? তবে সাবেক সাংসদ বদির পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবী করেছেন আবদুর রহমান বদি তার স্ত্রী শাহিন আক্তারকে আবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দিতে কাজ করতেছেন। সেক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও জাফর আলম চৌধুরী জন্য দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এবারও সোনার হরিণ হয়ে থাকবে এবং দলীয় মনোনয়ন লাভের অপেক্ষার পালা তাদের জন্য আবারও দীর্ঘ হবে!
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্যানুযায়ী, দণ্ডিত হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। তিনি দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তাঁর আপিল বিচারাধীন। আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকায় এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আবদুর রহমান বদির নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিতদের খালাস না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই এমন মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান বলেন, নৈতিক স্খলনের মামলায় দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনে অযোগ্য হন। সাজা কখনো স্থগিত হয় না। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড বহাল থাকবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড.শাহ্দীন মালিক বলেন, হাইকোর্টেও নতুন ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হবেন। এর অর্থ হলো, এখন কেউ যদি দণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং তার আপিল যদি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে, তাহলে তিনি খালাস না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অর্থাৎ এটা যদি কার্যকর হয়, তাহলে আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আগামী জাতীয় নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। ফলে আপিল করেও দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবেন। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটি আপিল বিভাগেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।
সুশীল সমাজের মতে, দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া বা মত। আইনজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি সংবিধানসম্মত। আবার কারও মতে, আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে এমন পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অবশ্য যতক্ষণ না আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল বা স্থগিত করে তাকে জামিন দেন। কারণ, কোনো আদালতের দেয়া সাজার বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন থাকলেও দণ্ড বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই দণ্ড কার্যকর থাকে। এটা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি বাধা। এক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের বিধানই প্রাধান্য পাবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-