নাজিম মুহাম্মদ •
টেকনাফের হ্নীলা থেকে ট্রাকে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচার করছিল ঢাকার গাজীপুরের জয়দেবপুরের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস ও তার ভাগিনা আশরাফুল।
ট্রাকের দুটি এক্সেলের মধ্যে একটির ভেতরের যন্ত্রপাতি খুলে ভেতরে তারা ইয়াবা বহন করতো। ইয়াবা বহনের টাকায় কুদ্দুস ইতিমধ্যে কিনেছেন চারটি লং ভ্যাহিকেল।
যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। লং ভ্যাহিকেলগুলো তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে ভাড়ার কাজে ব্যবহার করতেন। চুক্তিতে ট্রাক ভাড়া নিয়ে টেকনাফ থেকে ইয়াবা বহন করতেন।
দীর্ঘদিন ধরে ট্রাকের এক্সেলে কৌশলে লুকিয়ে ইয়াবা বহন করলেও গত ৬ নভেম্বর ৩৫ হাজার ইয়াবা নিয়ে কুদ্দুসের ট্রাক ধরা পড়ে কর্ণফুলী থানা পুলিশের হাতে। এ সময় পুলিশের হাতে আটক হয় কুদ্দুসের ভাগিনা আশরাফুল ও ট্রাক চালক রাকিব মোল্লা। দেড় লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ৩৫ হাজার ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছানোর দায়িত্ব নিয়েছিল আবদুল কুদ্দুস। ইয়াবা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার গ্রেপ্তার আশরাফুল ও ট্রাক চালক রাকিব মোল্লা করেছে।
কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (ওসি) জহির হোসেন জানান, কুদ্দুস দীর্ঘদিন ধরে ট্রাকে টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচার করছিল ঢাকায়। আমরা প্রথমে কুদ্দুসের ভাগিনা ও ট্রাক চালককে ইয়াবাসহ আটক করি। ট্রাক চালক আদালতে জবানবন্দিতে কুদ্দুসের ইয়াবা পাচারের কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু বিষয়টি তিনি জানতেন না। গত ১১ নভেম্বর আমরা গোপন সংবাদে জানতে পারি এক সহযোগী নিয়ে কুদ্দুস নগরীর জিইসি মোড়ে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তাদেরকে আমরা গ্রেপ্তার করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াবা পাচারের কথা তিনি স্বীকার করেছেন। ইয়াবা পাচারের মাধ্যমে তিনি মালিক হয়েছেন অঢেল সম্পদের।
গত ৬ নভেম্বর ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৩৪৯৮) এক্সেলের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৫ হাজার ইয়াবা। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় ফরিদপুরের কোতোয়ালী থানার আলতাফ মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ রাকিব (২৯) ও বোয়ালমারীর রহমান খাঁর ছেলে আশরাফুল খানকে। জনৈক শেফায়েতের মালিকানাধীন ট্রাকটি পরিচালনা করেন গাজীপুরের জয়দেবপুরের মাদারীপুর গ্রামের মৃত শেখ আবদুল আজিজের ছেলে মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস (৪৫)। ট্রাক ধরা পড়ার খবর পেয়ে গত ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামে আসেন আজিজু ও তার সহযোগী ফরিদপুরের মাধবদিয়া গ্রামের হায়দার বেপারীর ছেলে জহুরুল বেপারী (২৯)। নগরীর খুলশী থানার জিইসি মোড় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে কর্ণফুলী থানা পুলিশ।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ট্রাক চালক রাকিব মোল্লা বলেন, ট্রাকটি পরিচালনা করেন আবদুল কুদ্দুস। তার ভাগিনা আশরাফুলের মাধ্যমে গাড়ির চালক হিসাবে নিযুক্ত হই কয়েকমাস আগে। কুদ্দুস তাকে লবণের ভাড়ার কথা বলে টেকনাফে পাঠান।
টেকনাফের হ্নীলা বাজারে পৌঁছার পর খাবারের টাকা দিয়ে একজন বদলি চালক নিয়ে ট্রাক নিয়ে যান কুদ্দুস। ২/৩ ঘণ্টা পর ট্রাকটি খালি ফেরত নিয়ে আসেন। বললেন, লবণের মান ভালো নয়। রাকিবকে খালি গাড়ি নিয়ে ঢাকায় চলে যেতে বলেন।
কুদ্দুস গাড়ির সাথে যাননি। ৬ নভেম্বর ট্রাকটি নিয়ে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের একটি সিএনজি পাম্পে অবস্থান করেন। পরের দিন (৬ নভেম্বর) সকাল বেলা চট্টগ্রামে আসার পথে কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যার টেকে চেকপোস্টে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ট্রাক চালক রাকিব ইয়াবা পাচারের মূল হোতা কুদ্দুসের নাম পুলিশকে বললেও তিনি বুঝতে পারেননি। গত ১১ নভেম্বর তিনি এক সহযোগী নিয়ে চট্টগ্রামে আসলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ট্রাক চালক রাকিব। ধরা পড়ার পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল কুদ্দুস জানান, তার বাড়ি জয়দেবপুরে। তিনি মূলত ট্রাকে ইয়াবা বহন করেন। এর আগে আরো বেশ কয়েকবার একই পদ্ধতিতে টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে গেছেন। তার পূর্ব পরিচিত টেকনাফ হ্নীলা বাজারের লুৎফুর রহমানের মাধ্যমে তিনি ইয়াবা বহন করেন। লুৎফুর পেশাদার ইয়াবা পাচারকারী।
সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর একই ট্রাকে একই পদ্ধতিতে পাঁচ হাজার ইয়াবা নিয়ে গিয়েছিল ঢাকায়। বিনিময়ে ৩৫ হাজার টাকা ভাড়া নেয়া হয়েছিল। ঢাকায় পৌঁছার পর লুৎফুরের লোক এসে ইয়াবাগুলো নিয়ে গিয়েছিল। গত ৪ নভেম্বর ফের খালি ট্রাক পাঠানো হয় ইয়াবা আনতে। এবারে ৩৫ হাজার ইয়াবা নেয়া হয়েছিল গাড়ির এক্সেলের ভেতরে। আর ৩৫ হাজার ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে দেড় লাখ টাকা বহন খরচ দেয়ার কথা ছিল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-