সব প্রস্তুতি শেষ, তফসিল ১৪ অথবা ১৫ নভেম্বর

ডেস্ক রিপোর্ট :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে কবে এই ঘোষণা দেওয়া হবে সে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে আজ রবিবার (১২ নভেম্বর)। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়ে রেখেছে ইসি। এখন বাকি কেবল ইসি সভায় তফসিল অনুমোদন এবং ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা।

ইসি সভা কবে হবে তার সিদ্ধান্তও আজ চূড়ান্ত হতে পারে। সভার দিনই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, আগামী ১৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার অথবা বুধবার তফসিল ঘোষণা করা হবে। ভোটগ্রহণ হতে পারে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার আগে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ সম্পন্ন করার চিন্তা-ভাবনা থেকে সরে এসেছে ইসি। কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আগে থেকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের আর সময় নেই। রোডম্যাপে নির্বাচন কমিশনের অধিকসংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের কথা বলা থাকলেও তা হচ্ছে না বলেই সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

প্রথা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার দিনই রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। জেলা প্রশাসকরাই রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তাদের সঙ্গে থাকেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই বিভাগীয় কমিশনার।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে এডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড পদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৮ জন জেলা নির্বাচন অফিসার এবং ৩০ জন উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আগে থেকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়ার আর সময় নেই। এ বিষয়ে তফসিল ঘোষণার দিনই সিদ্ধান্ত হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ

নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আইনি কাঠামোতে বেশকিছু সংস্কার করা হয়েছে। কিছু সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। নতুন দলের নিবন্ধনের কাজও সম্পন্ন। ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এতে কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি। আর ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১৪টি।

ভোটসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ আরও কিছু কাজ চলমান রয়েছে। পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের প্রাথমিক ধাপ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও কিছু পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। চূড়ান্ত হয়েছে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালাও। সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেলের অনুমতি দিয়ে সাংবাদিক নীতিমালাও সংশোধন করা হয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, এবার নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন ৯ লাখের বেশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা। এবার নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা, নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাতা মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর বাইরে প্রশিক্ষণে খরচ হবে ১০০ কোটি টাকার বেশি।

নির্বাচন কমিশন গতকাল শনিবার নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ব্যালটবক্স পাঠানোর কাজ সম্পন্ন করেছে। এ ছাড়া ডিসি ও এসপিদের প্রশিক্ষণ কর্মশালাও গতকাল শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরে প্রায় ৯ লাখ প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

অ্যাপস উদ্বোধন আজ

নির্বাচনে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আজ অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অ্যাপসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ আগেও ছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে এ বিধান যুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রার্থীরা ওই সুযোগ গ্রহণ করেননি। এবার বিধানটি আরও সংস্কার করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অনলাইনে মনোনয়নপত্র পূরণ ও দাখিল করতে হলে পোর্টালে প্রবেশ করে প্রার্থীকে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা ভোটার নম্বর, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি এবং নির্বাচনী এলাকার নম্বর ও নাম এন্ট্রি করে নিবন্ধন করতে হবে।

নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর ইউজার নেইম ও পাসওয়ার্ড পাওয়া যাবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের বায়োমেট্রিক ফিচারে সংরক্ষিত মুখাবয়বের সঙ্গে প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর চেহারা শনাক্ত (ফেসিয়াল রিকগনিশন) করতে হবে। পোর্টালে প্রবেশ করে প্রার্থীকে পর্যায়ক্রমে মনোনয়ন, ব্যক্তিগত তথ্যাদি ও হলফনামা সংক্রান্ত তথ্য এন্ট্রি করতে হবে। হলফনামা, আয়কর সংক্রান্ত কাগজপত্র, দলীয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলের মনোনয়ন সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্রসহ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র স্ক্যান করে পিডিএফ আকারে সংযুক্ত করতে হবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন সংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরাসরি দাখিল করতে হবে। জামানতের টাকা জমা দেওয়া যাবে পোর্টালের অনলাইন পেমেন্ট অপশন ব্যবহার করে। টাকা জমা দেওয়ার পর মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে।

মনোনয়নপত্র দাখিলের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রার্থীর মোবাইল ফোনে এর প্রাপ্তি স্বীকার, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের স্থান ও তারিখ, বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত, প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পর্যায়ক্রমে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। পোর্টালেও এসব তথ্য দেখা যাবে।

এ ছাড়া ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপসে ভোটারের তথ্যের পাশাপাশি ইসি কর্মকর্তাদের জন্য রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক, এসপি এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের পরিচয় ও ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে।

আরও খবর