নিজস্ব প্রতিবেদক •
বন মামলার আসামির হুমকি -ধমকিতে অসহায় ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বনকর্মীরা।
কক্সবাজার সদরের ছনখোলা ইউনিয়নের আলী হোছাইনের পুত্র মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে বনকর্মীদের হুমকি ধমকি নাজেহাল সহ গুরুতর অভিযোগ উঠে।রেহাই পেতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বিট কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, বিভিন্ন বন মামলার আসামি মোহাম্মদ আলি বনবিভাগের জায়গা জবরদখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়কর্তন সহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত।
জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর দুপুর ১২ টায় পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহমদ বাবুল, বিট কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্সহ আরএস দাগ নং ১১৮৪ সরকারি জায়গায় গৃহ নির্মাণে বাঁধা প্রদান করলে মোহাম্মদ আলি সহ সাঙ্গ- পাঙ্গরা ক্ষিপ্ত হয়ে বনকর্মকর্তা ও স্টাফদের মারমুখী আচরণ করে ৩০ মিনিট পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে।
এমনকি বনকর্মকর্তারা সরকারি বনভূমিতে অবৈধ গৃহ নির্মাণের ছবি ও ভিডিও ধারণ করলে মোহাম্মদ আলি মোবাইল সহ মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিট কর্মকর্তা রবিউলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
মোহাম্মদ আলির নেতৃত্বে বনকর্মীদের উপর চালানো হয় নির্যাতন। বিট কর্মকর্তাকে কিল – ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক জখম ও করা হয়।
কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিম পাড়ার ১ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বনকর্মকর্তা ও স্টাফরা শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পাশাপাশি নির্যাতনের শিকার হন। পরবর্তীতে বনকর্মীদের উপর নির্যাতনের আওয়াজ শুনে পথচারীরা তাদের উদ্ধার করেন।
বিট কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন,বন ও বনজ সম্পদ রক্ষায় একাগ্রচিত্তে কাজ করছি। সরকারি সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে বনখেকো মোহাম্মদ আলিসহ তার সাঙ্গ – পাঙ্গদের হামলায় শারীরিক লাঞ্ছিত হওয়ার পাশাপাশি নির্যাতনের শিকার হই। হুমকি – ধমকিতে অতিষ্ঠ হয়ে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থানায় অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্ত বনখেকো মোহাম্মদ আলির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
তিনি আরও বলেন, মোহাম্মদ আলি একজন সরকারি বনভূমি জবরদখল ও পাহাড়কর্তনকারী ব্যক্তি। সরকারি বনভূমি জবরদখলের দায়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
সরকারি রক্ষিত বনভূমিতে পাহাড় কাটা, ও বনভূমি জবরদখল করে পাকা দালান ঘর নির্মাণ করার অপরাধে সিআর বন- ৩৩/২২ (সদর), পি.ও. আর নং ১৯/ পি. এম / ৭ / দিঘী অব ২০২২- ২০২৩ এবং বনভূমি হতে গাছ পাচারের দায়ে পি. ও. আর নং -২৩ / পি. এম / ০৫ / দিঘী অব ২০০৭-৮ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
বনখেকো মোঃ আলি বিভিন্ন বন মামলার আসামি হয়ে বনবিভাগের কর্মকর্তা – কর্মচারীদের ষড়যন্ত্র পূর্বক হেয় প্রতিপন্ন করে নিজের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে।
বিভিন্ন মহলে বনকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে হয়রানির পাশাপাশি ক্ষতিসাধন করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে দায়িত্ব পালনরত বন বিভাগের কর্মকর্তা – কর্মচারীদের দূর্বল করে ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক অবৈধভাবে বনভূমি জবরদখল করা এবং নিজের স্বার্থ হাসিল করা তার একটি অপকৌশল মাত্র। দেশ ও জাতির স্বার্থে বনখেকো মোহাম্মদ আলি সহ তার সাঙ্গ – পাঙ্গদের আইনের আওতায় আনতে জোর দাবী জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বনকর্মকর্তা জানান,বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ আলির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিগত ৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ডঃ প্রান্তোষ চন্দ্র রায় ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে পরিদর্শনে যায়।
অভিযোগে উল্লেখিত বাদশার ঘোনা, ছনখোলা পশ্চিমপাড়া,সহ আশপাশ এলাকায় পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে আলাপ-আলোচনাপূর্বক জানা যায় অভিযোগকারী মোহাম্মদ আলি ( ৫০) নিজেই একজন জবরদখলকারী, ও পাহাড়কর্তনকারী।
মূলত বনকর্মকর্তাদের হয়রানি, নাজেহাল, অপপ্রচার, মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনসহ বনকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা তার একটি অপকৌশল মাত্র । এ অপকৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে আসছেন তিনি।
পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা ফারুক আহমদ বাবুল বলেন, মোহাম্মদ আলির নামে ১০ টি মামলা দেয়া হবে এমন কোন হুমকি দেওয়া হয় নি। বিভিন্ন বন মামলার আসামি মোহাম্মদ আলি বরং বিট কর্মকর্তা ও স্টাফদের হুমকি ধমকির পাশাপাশি নাজেহাল করে আসছে। বন আইনে অপরাধ করলে তো তার বিরুদ্ধে মামলা হবে আর এটাই স্বাভাবিক। বন অপরাধের সাথে যে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও বন আইনে মামলা দায়ের করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ আলির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১২ কড়া জমি নিয়ে বনবিভাগের সাথে তার বিরোধ। এর মধ্যে বেশিরভাগ জমি জোত। সেখানে বন বিভাগের জমি খুব অল্প। আশেপাশে বনবিভাগের জমির উপর মানুষ ঘর করে থাকছে,তাতে বনবিভাগ বাঁধা দিচ্ছে না। শুধু তার ক্ষেত্রে বনবিভাগ বাঁধা দিচ্ছে।
তিনি স্বীকার করে বলেন, বিট অফিসার এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তিনি জেলা প্রশাসক, দুদক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বিচার দিয়েছেন। কিন্তু কোন প্রতিকার পান নি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের মান্যবর চেয়ারম্যান বরাবর তিনি বিচার দিয়েছেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি পিএমখালীর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহর কথামতো মোহাম্মদ আলির আইডি থেকে বিট অফিসারের বিরুদ্ধে যেসব কথা লিখেছেন তা সরিয়ে নিয়েছেন ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের কথা বিট অফিসার মানছেন না, তাকে শুধু শুধু মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।
এ প্রতিবেদকের বক্তব্যঃ এ ব্যাপারে এ প্রতিবেদকের কাছে একটি ভিডিও এসেছে, সেখানে দেখা যায়, রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বনবিভাগের অন্যান্য কর্মচারীদের মোহাম্মদ আলিসহ তার সদস্যরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং অনবরত শাসিয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, বন ও বনজ সম্পদ রক্ষায় বনবিভাগ সজাগ ও সতর্ক রয়েছেন। বনভূমি জবরদখল ও পাহাড়কর্তনকারী যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন বন অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বনবিভাগের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বনবিভাগের নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে।
অবৈধভাবে পাহাড়ি মাটি,বালি ও কাঠ পাচার রোধে বনবিভাগের নিয়মিত অভিযানও চলমান রয়েছে। সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে বনবিভাগকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-