ডেস্ক রিপোর্ট •
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা আজ থেকে শুরু হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি চলছে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে অথবা প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
গত ২২ অক্টোবর সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছে। চলতি সংসদের শেষ অধিবেশন আগামী বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) শেষ হচ্ছে।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যেই ভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।
এরই অংশ হিসেবে আজ বুধবার তফসিল নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন সিইসি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তার আকার কেমন হবে সেটি নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন থাকলেও খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদ্যসমাপ্ত বেলজিয়াম সফর নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তা খোলাশা করেছেন।
তিনি বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাদা কোন সরকার থাকবে না। রুটিন মাফিক কাজের জন্য মন্ত্রিসভার আকার যেমন আছে, তেমনই থাকবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা রুটিন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন। তারা কেউ সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন না। সংবিধান অনুযায়িই যথাসময়ে সংসদ নির্বাচন হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভার আকার ঠিক রাখা হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে যে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল তার আকার ছিল ২৯ সদস্যের। এর বাইরে ১০জন উপদেষ্টা ছিলেন। সব মিলিয়ে ছিলেন ৩৯ জন। সেবার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দেওয়া হয়। নতুন কিছু মুখ যুক্ত করা হয়েছিল। এবার তা করা হচ্ছে না। এদিকে সংসদ অধিবেশনের আগেই বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের হিসাব ও নিকাশ এবং ফাইলপত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। আগামি নির্বাচনের পর তাদের মধ্যে অনেকেই মন্ত্রিত্ব নাও পেতে পারেন এমন আশঙ্কায় আগেভাগেই সব কিছু গোটানো শুরু করছেন। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া বেশ আগে থেকেই শুরু করেছে ইসি। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকার ও বিরোধীদল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অংশিজন, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ওপরই নির্ভর করছে। গতবার (গত নির্বাচনে) যেভাবে ছিল ওটাই নির্বাচনকালীন সরকার। এটা শেখ হাসিনার এখতিয়ার।
বর্তমান সংবিধানের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের মতোই স্বাভাবিক সরকারই থাকবে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে এই সরকার।
সংবিধানেই বলা আছে, নির্বাচনকালীন সরকারের নির্বাহী বিভাগ ইসিকে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন, এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করিবে না।’ সংবিধানের ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে, তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’
অন্যদিকে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়নসহ কিছু কিছু কাজে সরকারকে কমিশনের অনুমতি নিতে হয়। ওই সময়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলে এমন কর্মকান্ড বিধিনিষেধ আরোপ থাকে। অর্থাৎ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন এবং নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারের মন্ত্রিসভার ক্ষেত্রেও এটাই প্রযোজ্য হবে।’
ইসির একাধিক সূত্র বলছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন সক্রিয় রয়েছে। সে জন্য সব দলকে নির্বাচনে আনতে ভোটের একাধিক তারিখও রাখা হতে পারে। এবার ৫০ থেকে ৬০ দিন হাতে রেখেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে ইসি। ইতিমধ্যেই ব্যালট পেপারে ৩০০ আসনে ভোট করতে প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল যথাক্রমে ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ও ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। এবার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করতে গেলে নভেম্বরের শুরু থেকে দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যেই ভোটের তফসিল ঘোষণা করতে হবে ইসিকে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-