বিশেষ প্রতিবেদক :
বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা রবিবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার জেলায় ৫ টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। হরতাল ও তার পরবর্তি নাশকতা, সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টার দায়ে পুলিশ বাদি হয়ে কক্সবাজারের ৪ টি থানায় এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে বিএনপি ও জামায়াতের ৬৬ জন নেতা-কর্মীদের নাম উল্লেখ্য করে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হলেও তার সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম এসব সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, হরতালকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের বিচ্ছিন্নভাবে নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়েছে। যেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ককটেল, ইট, লাঠি সহ নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এসব ঘটনায়এ পর্যন্ত কক্সবাজার সদর সহ ৪ টি থানায় পুলিশ বাদি হয়ে ৫ টি মামলা দায়ের করেছে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোদ্রব্যদি আইনে দায়ের করা ৫ টি মামলায় শনাক্ত হওয়া ৬৬ জনের নাম উল্লেখ করে অন্যান্যদের অজ্ঞাত রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলের ছবি. ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। এসব যাচাই-বাছাই করে অন্যান্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, দায়ের হওয়া ৫ টি মামলার মধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় ২ টি, রামু, মহেশখালী ও ঈদগাঁও থানায় ১ টি করে ৩ টি মামলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট থানার একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও মামলার বিস্তারিত জানাতে আগ্রহী হননি কেউ। তবে একটি সূত্রে দায়ের করা মামলার আংশিক এজাহার প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এতে দেখা গেছে, রামু থানায় দায়ের করার মামলার বাদি উপ-পরিদর্শক মুহাম্মদ ইয়াছিন। যেখানে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ৮ জনকে। যেখানে বলা হয়েছে ২৯ অক্টোবর রবিবার দুপুরে আড়াই টার পরে রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়াস্থ দুবাই পার্ক কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন অনুমান ৫০ ফুট উত্তরে কক্সবাজার-চট্টগ্রামগামী মহাসড়কের উপরে অবস্থান নিয়ে কিছু লোক যানবাহন চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি সহ জনমনে আতংক সৃষ্টি করার লক্ষ্যে লাঠি, ইট পাটকেল, লোহার রড নিয়ে যানবাহন ভাংচুর করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে সমবেত দুষ্কৃতিকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়ে দ্রত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন গাড়ির গøাসের ভাঙা অংশ, বিভিন্ন সাইজের ইটের টুকরা, গাছের লাঠি, লোহার রড উদ্ধার করা হয়। এসময় আশে-পাশের লোকজন সহ নানা মাধ্যমে ৮ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
রামু থানায় দায়ের করা মামলার ৮ আসামি হলেন, কাউয়ারকোপ ইউনিয়নের জসিম উদ্দিন রনি, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের আনসারুল হক, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের আবুল বশর বাবু, চাকমারকুল ইউনিয়নের আবু তালেব ছোটন, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের শাহজাহান লুতু, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হেমসেল সরোয়ার, আরিফুল ইসলাম নয়ন, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের আবছার কামাল। অভিযুক্তরা বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মী বলে এজাহারে উল্লেখ্য রয়েছে।
ঈদগাঁও থানায় দায়ের করা মামলাটির বাদি উপ-পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম। মামলায় এজাহারনামীয় আসামী ১৫ জন। এজাহারে বলা হয়েছে, রবিবার সাড়ে ৩ টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মেহেরঘোনা এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পোড়া টায়ারের অংশ, বিস্ফোরিত ককটেলের অংশ, ভাঙা ইট, অবিস্ফোরিত ৫ টি ককটেল উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় এজাহারের উল্লেখ থাকা ১৫ আসামি হলেন, উত্তর নাপিতখালী এলাকার বখতিয়ার ছিদ্দিক সাইমন, লরাবাগ এলাকার সোহাগ, কামাল, ছাতিপাড়ার মামুন, পোকখালীর আজিজুল হক রুবেল, সওদাগরপাড়ার আলমগীর তাজ জনি, জাগিরপাড়ার রুস্তম, সোহেল রানা, ভাদিতলার জসিম উদ্দিন, আবদুর রহমান, পালাকাটার আনিছ, বেলাল, মধ্যম মাইজপাড়ার আরিফ, উত্তর মাইজপাড়ার সাজ্জাদ, কোনারপাড়ার আনোয়ার। এরা সকলেই বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী।
কক্সবাজার সদর থানার অপর মামলাটির বাদি উপ-পরিদর্শক মিঠুন সিংহ। যে মামলায় এজাহারে আসামি হিসেবে ১৪ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম নোমানের নেতৃত্বে আলীর জাহাল সাইফুল কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন ভাংচুর শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ককটেল বিস্ফোরন করে। পুলিশ লাঠি চার্জ করলে অবরোধকারিরা পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে লোহার রড, কাঠের লাঠি, গাড়ির গøাস ভাঙ্গা অংশ, বিস্ফোরিত ককটেলের অংশ উদ্ধার করে।
জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম নোমান ছাড়া এ মামলার অপর ১৩ আসামি হলেন, পেশকার পাড়া এলাকার জিয়াউল হক, আব্দুল মালেক, দরবেশ আলী, মোসলেম উদ্দিন, দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার তানজিমুল হক, ইবনে ইলিয়াছ মনছুর, সাইফুল আজম, চান্দেরপাড়ার নোমান, ফজল মার্কেট এলাকার আমিনুল ইসলাম হাসান, স্টেডিয়ামপাড়ার এমইউ বাহাদুর, দেলোয়ার হোসেন, শহিদুল ইসলাম বাহাদুর, দক্ষিণ জানার ঘোনার মো. কাসেম।
এ ছাড়া মহেশখালী থানার দায়ের করা মামলাটির বাদি উপ-পরিদর্শক সজল কান্তি নাথ। যে মামলায় আসামি করা হয়েছে ১০ জনকে। কালারমারছড়া এলাকা সংঘবদ্ধ হয়ে এরা নাশকতার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এই মামলার আসামিদের নাম জানা যায়নি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-