ডেস্ক রিপোর্ট •
রাজধানীতে শনিবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পালটাপালটি সমাবেশ ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে ১১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর। যদিও বিএনপি বলছে, তাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি চলানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যে ৩৩ জনকে গ্রেফতার করেছে তাদের অধিকাংশই ওয়ারেন্টভুক্ত। গণগ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকনকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করেছে নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল নরসিংদী আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণগ্রেফতার বলে কিছু হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) রয়েছে, শুধু তাদেরকেই আটক করা হচ্ছে। আইনের বাইরে গিয়ে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, আইনে এর কোনো সুযোগ নেই।’ পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই ওয়ারেন্টভুক্ত রাজনৈতিক এসব আসামিদের গ্রেফতার হচ্ছে বলেও দাবি করেন ডিএমপির এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘খায়রুল কবির খোকনের বিরুদ্ধে নরসিংদীতে মামলার ওয়ারেন্ট আছে। এছাড়া ঢাকায়ও মামলা রয়েছে। সেজন্য ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাইদুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে ২০-২৫ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। মহাসমাবেশ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির উদ্দেশ্যেই পুলিশ গণগ্রেফতার শুরু করেছে।’
দুই দলের পালটাপালটি সমাবেশ ঘিরে সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতির মধ্যেই রাজধানীতে গত পাঁচ দিনে রাজনৈতিক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত ৩১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরের প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসাবে র্যাব, যাতে করে কেউ নাশকতার উদ্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করতে না পারে। একই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও চেকপোস্ট বসানো হবে। বুধবার দুপুরে কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। শুধু ঢাকা নয়, রাজধানীর বাইরেও চেকপোস্টে তল্লাশি শুরু করেছে র্যাব।
মহাসড়কে র্যাব-পুলিশের চেকপোস্ট :২৮ অক্টোবর বিএনপি-আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশকে সামনে রেখে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাহাঙ্গীরনগর ও আমিনবাজার এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যানবাহনে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও মালামাল তল্লাশির কারণে সেখানে যানবাহন চলাচলে কিছুটা ধীরগতি লক্ষ করা গেছে।
আমিনবাজার চেকপোস্টে থাকা ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৮ তারিখে যেহেতু রাজধানীতে দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ আছে, সেহেতু কেউ যেন ঢাকায় প্রবেশ করে কোনো নাশকতা কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই পুলিশের এই চেকপোস্ট কার্যক্রম চলছে।
তল্লাশি কার্যক্রমের বিষয়ে র?্যাব-৪ সিপিসি-২-এর স্কোয়াড কমান্ডার (এএসপি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এটা আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ। যানবাহনের ফিটনেস, লাইসেন্স পরীক্ষা ও মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট যাদের নেই, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
দুই ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলায় খোকনকে গ্রেফতার
আমাদের নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীতে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের মোটরসাইকেল শোডাউনে গুলি করে দুই ছাত্রদল নেতা সাদেকুর রহমান ও আশরাফুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকনকে গতকাল ঢাকায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঐ দুই জনকে হত্যার ঘটনায় গত ২৬ মে খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শহর বিএনপির সভাপতি এ কে এম গোলাম কবির কামাল, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুত্, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন মো. আলতাফ হোসেন।
রাণীশংকৈলে বিএনপির তিন নেতা গ্রেফতার
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, বুধবার রাতে বিএনপির ৩ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সদর থানায় তাদের নামে মামলা থাকায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে মর্মে রাণীশংকৈল থানার ওসি গুলফামুল ইসলাম মন্ডল জানান। গ্রেফতারকৃতরা হলেন—রাণীশংকৈল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, এম আর বকুল মজুমদার (৩৭), নেকমরদ ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান আতিক (৩২) ও হোসেনগাঁও ইউনিয়ন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজিমুদ্দিন (৫৭)।
নওগাঁয় নাশকতার মামলায় জামায়াতের নেতা গ্রেফতার
নিয়ামতপুর (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুরে নাশকতার মামলায় জামায়াতের এক সক্রিয় সদস্যকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে নিয়ামতপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি হলেন, উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সোবাহানের ছেলে কাওসার আরিফ (৪৫)। নিয়ামতপুর থানার ওসি মাইদুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা ছিল। দীর্ঘদিন ধরে সে পলাতক ছিল।
বাগমারায় বিএনপি-জামায়াতের ১০ নেতাকর্মী আটক
বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা জানান, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বুধবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ১০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে আছেন উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মুর্তজা, জামায়াতের হামিরকুত্সা ইউনিয়নের দায়িত্বশীল আব্দুর রশিদ, তারঘরিয়ার মোহাম্মদ আলী, আবু বক্কর সিদ্দিক, চাপাকুড়ি গ্রামের জামায়াত নেতা প্রভাষক নজরুল ইসলাম ও হেলাল উদ্দিন। বাগমারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ রয়েছে বা তাদের অপরাধের কথা জানাননি।
পাবনায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার
পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনায় রাতভর অভিযান চালিয়ে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিএনপির দাবি, ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করেই এই গণগ্রেফতার। তবে পুলিশের দাবি, গণগ্রেফতার নয়, যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতাারি পরোয়ানা বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদেরকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আছেন পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও পাবনা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ তৌফিক হাবিব, আটঘরিয়া উপজেলা মত্স্যজীবী দলের সভাপতি ফরিদ, আতাইকুলা ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শান্ত, মাধবপুরের বিএনপি নেতা সোলাইমান, বেড়া পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. ফারুক আহমেদ জনি, হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. দুলাল। পাবনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকার বলেন, অনেক নেতাকর্মীদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই, অনেকেই জামিনে রয়েছেন। তারপরও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-