বিশেষ প্রতিবেদক :
ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজারে তিন জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে দুইজন দেওয়াল চাপা পড়ে এবং একজন গাছ চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে অনেক গাছ।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাতে পাহাড়তলী সমাজ কমিটির নেতা মো. টিপু বলেন, ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে তার এলাকায় খালেক নামে একজন নিহত হয়েছেন।
জানা যায়, মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে একজন নিহত হয়েছেন মহেশখালীতে। এ ছাড়া চকরিয়ায় বদরখালীতে গাছ পড়ে আসকর আলী নামে একজন নিহত হয়েছেন।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে এসব মৃত্যুর তথ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, ভোলার ওপর দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমের কথা ছিল অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের। তবে গতিপথ পাল্টে ঝড়টি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার ওপর দিয়ে আগামী ১০ ঘণ্টার মধ্যে অতিক্রম করবে।
তিনি বলেন, হামুন গতিপথ পাল্টেছে। ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশটি উপকূল অতিক্রম করা শুরু করেছে। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম করবে। বর্তমানে বাতাসের বেগ ৭০-৮০ কিলোমিটার। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে সাগর উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, কুতুবদিয়া দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের একটি অংশ অতিক্রম করেছে। তবে মূল চোখ এখনো উপকূল অতিক্রম করবে। এটি আরও ৮/১০ঘণ্টা সময় লাগবে। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০৪ রেকর্ড করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং মোংলা ও পায়রাকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের দৈর্ঘ্য–প্রস্থসহ মোট ব্যাস প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। এটি উপকূলের ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসায় এর অগ্রভাগের প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশ এখন বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করছে। সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি সবচেয়ে বেশি থাকে এর কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্র ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতি এবং প্রচুর মেঘসহ উপকূলে এলে ঝড়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে থাকে।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ কামাল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন যা ভাবেননি তা করেছে। বাতাসের কারণে অসংখ্য ঘর, গাছ ভেঙ্গে গেছে। ঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রংপুর বিভাগ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে।
টেকনাফে ৮৭ মিলিমিটার, কক্সবাজারে ৬৫, কুতুবদিয়ায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়ার সবশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং তাদের কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চাল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-