ইত্তেফাক :
মিয়ানমারে এক বছর ধরে কারাবন্দি (মামলায় খালাস পাওয়া) ৩৫ বাংলাদেশিকে ফেরতের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েক বার চিঠি চালাচালি করেও মিয়ানমার থেকে এখনো কোনো সদুত্তর মিলেনি। তবে ঐ দেশে কারাবন্দিদের স্বজনরা জানিয়েছেন, তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রেঙ্গুন কারাগার থেকে মংডুর বুচিডং কারাগারে পাঠিয়েছে। কারাবন্দিরা দেশে ফেরার জন্য আকুতি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের টেকনাফের একজন মানবাধিকার কর্মী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাদেরকে ফেরত আনার জন্য লিখিত আবেদন করেন।
আব্দুর রহিম নামে ঐ মানবাধিকার কর্মী বলেন, কারাবন্দি ৩৫ জনের মধ্যে ১৩ জনের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ শাখায় আবেদন করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি অবগত করে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে চিঠিও দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা ফেরত আসেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে টেকনাফ থেকে অবৈধ পথে ট্রলারযোগে ১৮০ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পরে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে আটক করে। তাদেরকে আটক করে ইয়াঙ্গুনের একটি কারাগারে বন্দি করে। এ নিয়ে ইয়াঙ্গুনের একটি থানায় তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা হয়। ঐ মামলায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাদেরকে খালাস দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই তাদেরকে ইয়াঙ্গুন কারাগার থেকে বাংলাদেশের টেকনাফের বিপরীত পাশে অবস্থতি মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু বন্দরের বুচিডং কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। বুচিডং কারাগার মংডু বন্দর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
এদিকে টেকনাফে কর্মরত বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে ৩৫ জন বাংলাদেশির নাম ঠিকানা জানতে পেরেছে। বাকি ১৪৫ জনের ভাগ্যে কি হয়েছে, তারা কি আদৌ বেঁচে আছেন কি না—সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য কেউ জানাতে পারেনি। তবে বুচিডং কারাগারে বন্দি ৩৫ জন বাংলাদেশির মধ্যে অন্তত ১৩ জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন—সালামত উল্লাহ, মোহাম্মদ রেদোয়ান, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সৈয়দ আকবর, মো. নজরুল ইসলাম, মো. হামিদুল হক, মোসতাক আহমেদ, মাহমুদুল হক, বেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ সোহেল, আব্দুল হাকিম, সিরাজুল মোস্তফা ও রিদওয়ানুল ইসলাম।
এক বন্দির নিকটাত্মীয় বলেন, আমার স্বজন মংডুর একটি কারাগারে বন্দি। তিন মাস আগে কারাগার থেকে টেকনাফের একজনের কাছে ফোন করে তথ্য জানিয়েছে। তখনই জানতে পেরেছি যে, আমার স্বজন মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি।
জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েলফেয়ার উইংয়ের পরিচালক মোস্তফা জামিল খান গত ৪ অক্টোবর ও ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব চেনচারির কাছে পৃথক তিনটি মেইলে ৩৫ জনের সন্ধান চেয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। কারাবন্দি বাংলাদেশিদের বিষয়ে দ্রুত সন্ধান নিতে এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েলফেয়ার উইং।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-