দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী আ’লীগে, বিএনপিতে এগিয়ে কাজল

সোয়েব সাঈদ, রামু :

কক্সবাজার সদর, রামু ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে কক্সবাজার-৩ আসন। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। পর্যটন রাজধানী খ্যাত এ আসনটি নানাকারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অক্টোবরেই কক্সবাজার শহরের সাথে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন চালু হচ্ছে। চলছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণসহ একাধিক মেগা প্রকল্প।

বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এ পর্যটন নগরীতে। তাই আসনটি ধরে রাখতে ও পুনরায় বিজয়ী হতে মরিয়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তা হলে বিএনপির ঘাঁটি বলে খ্যাত কক্সবাজারের এ আসনটি তারা তাদের ঘরে নিয়ে যেতে কোমর বেঁধে মাঠে নামতে পারে। সেই হিসেবে এই আসনে সংসদ সদস্য মনোনয়নে পরিবর্তন আসারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংসদের ২৯৬ নাম্বার এ আসনটিতে সর্বত্র চলছে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে আলোচনার ঝড়। এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন নিয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা চলছে সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীকে নিয়ে। এরমধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের পরিবার থেকে ৩ জন সদস্য নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইমুম সরওয়ার কমল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন নিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে তিনি হ্যাটট্রিক করতে চান। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রামু খিজারী স্টেডিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন আয়োজিত বিশাল সমাবেশে সাইমুম সরওয়ার কমল এমপিকে আবারো মনোনয়ন দিতে দু’হাত তুলে সমর্থন জানান সমাবেশে আসা লক্ষাধিক জনতা। এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর একই মাঠে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশ ডেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দেন রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল।

১৯৯১ সাল থেকে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ছাড়া) এ আসনে তিনবার আওয়ামী লীগ ও তিনবার বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হন মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে তাঁকে হারিয়ে এমপি হন বিএনপির খালেকুজ্জামান। ২০০১ সালে নির্বাচনী প্রচারের সময় খালেকুজ্জামান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তাঁর ভাই প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে এমপি হন। ২০০৮ সালে দুই দলেই প্রার্থী বদল হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলকে হারিয়ে বিএনপির লুৎফুর রহমান কাজল ক্ষমতায় আসেন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে বিএনপির কাজলকে হারিয়ে পরপর দুবার এমপি হন সাইমুম সরওয়ার কমল।

এবার ক্ষমতাসীন দল থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়া কমল ছাড়াও মনোনয়ন পেতে মাঠে তৎপর কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) সাবেক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ, সংরক্ষিত আসনের এমপি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, তার স্বামী সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। এর মধ্যে সোহেল সরওয়ার কাজল ও নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের আপন ভাই-বোন।

সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, তিনি আবারও নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এর কারণ, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় তিনি কক্সবাজার শহরকে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজিয়েছেন। ঈদগাঁওকে উপজেলায় রূপান্তর করেছেন। রেল লাইন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অনেক মেগা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করে সরকার কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। বিগত ১০ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মানুষের সেবায় তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। প্রতিটি গ্রাম, অলি-গলি চষে বেড়িয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরপর দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছি। দুঃসময়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বুকে আগলে রেখেছি। তাদের দোয়া এবং ভালোবাসায় আমি নেত্রীর কাছে দলীয় মনোনয়ন চাইব। তাছাড়াও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন ৫ বছরে রেকর্ড উন্নয়ন করেছি আমি। সেই কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো বলে শতভাগ আশাবাদী।’

পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এ আসনে পরিবর্তন চায়। দুই মেয়াদে দলের এমপি থাকলেও মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা পায়নি। এ জন্য মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটাতে আমি প্রার্থী হতে চাই।’

নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। জনতার দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানাচ্ছি। দল থেকে মনোনয়ন চাইব। আমার যোগ্যতা বিবেচনায় দলের মনোনয়ন পাব বলে আশাবাদী।’

ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রযাত্রায় শামিল হতে হলে কক্সবাজারবাসীর জন্য প্রয়োজন গতিশীল, চৌকস ও যোগ্য নেতৃত্ব। কেননা কেবল দক্ষ ও সঠিক নেতৃত্বই বদলে দিতে পারে কক্সবাজারকে, গড়তে পারে সমৃদ্ধ আগামী। কক্সবাজারকে উন্নত, পরিবেশবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও স্বনির্ভর ও বিশ্বমানের আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।’

বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করব না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপির সঙ্গে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারবে না।’
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। কিন্তু নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি না।’

অপর দিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নেন। তবে এবার তাকে ছাড় দিতে নারাজ খালেকুজ্জামানের পরিবার। এই পরিবার থেকে তিনজন মনোনয়ন চাইতে পারেন। তারা হলেন খালেকুজ্জামানের স্ত্রী মারুফা জামান কলি, ছেলে তানসির জামান উৎস এবং ছোট ভাই সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমানের নামও আলোচনায় রয়েছে।

এই দুই দলের বাইরে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মফিজুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আরও খবর