ডেস্ক রিপোর্ট :
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ অস্ত্র ও চিহ্নিত অপরাধীদের ধরতে ‘বিশেষ’ অভিযানের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী বা ইউনিটগুলো এককভাবে বা ক্ষেত্রেবিশেষ যৌথভাবে অভিযান চালানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইতিমধ্যে সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, অবৈধ অস্ত্র ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তথ্য-উপাত্তসংক্রান্ত তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শেষ করেছে পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
এ অবস্থায় আজ (মঙ্গলবার) পুলিশ সদর দফতরেও উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ‘ক্রাইম কনফারেন্স’ আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে অংশ নেবেন সব জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, পুলিশ সদর দফতরের কনফারেন্স থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি-সংক্রান্ত বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। পুলিশ সদর দফতর, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, কৌশলগত কারণে অভিযানের সুনির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ আপাতত প্রকাশ করা হবে না। তবে এরই মধ্যে নির্বাচনি অভিযানের বা ‘অ্যাকশন প্ল্যানিংয়ের’ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি পর্যায়ে তথা- নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তী সংঘাত-সহিংসতা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হয়েছে। তফশিল ঘোষণা হলেই বিশেষ অভিযানের ধরন বা কার্যক্রমগুলো জোরালো হবে।
এ বিষয়ে সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকালে কথা হয় পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে মূলত বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়ে থাকে। অভিযানের দিন-ক্ষণ ঠিক করা হয়নি।
তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের অভ্যন্তরীণ কিছু প্রস্তুতি থাকে, সেগুলো যেমন- জনবল প্রস্তুত করা, প্রশিক্ষণ, লজিস্টিকস সাপোর্ট নিশ্চিতকরণসহ অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতিগুলো প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
এদিকে সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র থানায় জমা না দিলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
যেহেতু, জাতীয় নির্বাচনের সময় একেবারেই সন্নিকটে। যেকোনো দিন ঘোষণা করা হবে তফশিল। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় নির্বাচনের আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করেছে।
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও বাজতে শুরু করেছে নির্বাচনি ডামাডোল। তার সঙ্গে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা।
সোমবার যশোরের অভয়নগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনজন রাজনৈতিক নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। ফলে সংঘাতময় পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নেওয়ার আগে আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনি বিশেষ অভিযান শুরু করবে বলে জানা গেছে।
নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের পদক্ষেপ নিয়ে দেশের বিভিন্ন থানার অন্তত চারজন অফিসার ইনচার্জের (ওসি) সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ওসিরা জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই তারা মাঠ পর্যায়ে বৈধ বা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজসহ দাগি আসামিদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ করেছেন।
ইতিমধ্যেই এ কাজগুলো তারা চূড়ান্ত করে ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। পুলিশ সদর দফতর তথা দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা পেলেই শুরু হবে অভিযান। পুলিশ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসীদের তালিকা নিয়ে কাজ করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে স্বাভাবিক কারণে নানা ধরনের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ জন্য নির্বাচনের আগে একটা বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়ে থাকে।
বিশেষ করে যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ অর্থাৎ যারা নির্বাচনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বা ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারে, কোনো নেতা বা প্রার্থীর পক্ষে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে ভোটকেন্দ্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে- এমন ধরনের অপরাধীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়ে থাকে।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এবং অতীত রেকর্ডের ভিত্তিতে এ তালিকা তৈরি হয়। তারমধ্যে নতুন কিছু নামও আসে। তখন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সবাই মিলে নির্বাচনের আগে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়।
মূলত তফশিল ঘোষণার পর জাতীয় নির্বাচনের আগের সময়টুকু, নির্বাচনের দিনের পরিস্থিতি এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়গুলো মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে হয়। এসব পদক্ষেপ ঠিকঠাক নিতে পারলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-