বিশেষ প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামের দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইনে রোববার (১৫ অক্টোবর) ট্রায়াল রান হবার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে আগামী ০২ নভেম্বর করা হয়েছে। আর আগামী ১২ নভেম্বর এই রেললাইনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন স্থাপিত রেললাইন এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প। আগামী ০২ নভেম্বর এই রেলপথে ট্রেনের ট্রায়াল রান হবে। আর আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেললাইনের উদ্বোধন করবেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প আগামীকাল সোমবার (১৬ অক্টোবর) দিনব্যাপি পরিদর্শন করবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজন এমপি।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সহকারি একান্ত সচিব মো: রাসেদ প্রধান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজন আগামী ১৬ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সেতু পরিদর্শন শেষে সড়কপথে দোহাজারি রেলওয়ে স্টেশনের যাবেন। এরপর দোহাজারি রেলওয়ে স্টেশনে নবনির্মিত দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের দোহাজারি-কক্সবাজার অংশ আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ট্রলিযোগে দোহাজারি থেকে কক্সবাজার রেললাইন সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। এরপর বিকেল ৪টায় কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন।
এদিকে বহুল কাঙ্খিত চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন আগামী ১২ নভেম্বর। এর মধ্যদিয়ে কক্সবাজারবাসীর বহুল আলোচিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: সুবক্তগীন বলেন, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন স্থাপিত রেললাইন এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। একই সঙ্গে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক আইকনিক স্টেশনটিও অপারেশন করার জন্য প্রস্তুত। আশা করি, নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে বিশ্বমানের সর্বাধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত বন এলাকায় রেললাইন স্থাপন করায় বন্যহাতি ও বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের অদূরে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০১০ সালে হাতে নেয় সরকার। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু। ১৪৯টি বক্স কালভার্ট ও ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। লেভেল ক্রসিং রয়েছে ৯৬টি।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজারে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার।
এদিকে সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু নির্মাণেও কোরিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির জন্য খসড়া পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন হবে। এরপরই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চট্টগ্রামের কালুরঘাটের পুরোনো যে সেতুটি রয়েছে তা দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর আগেই সংস্কার করে মজবুত করার কাজ চলছে। অক্টোবরের মধ্যে সেতুটির সংস্কারকাজও সম্পন্ন হবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন হওয়ার পরের দিন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে না। আমরা হয়তো কিছুদিন সময় নেব। এরই মধ্যে হয়তো কালুরঘাটের পুরোনো সেতুতে ট্রেন সীমাবদ্ধ গতিতে চলবে। দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন যে রেললাইনÑ এটাতে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন লোকোমোটিভ ট্রেন যাতে চলাচল করতে পারে সে উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত কালুরঘাটে নতুন সেতু না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত পুরোনো সেতু অংশে শুধু সীমাবদ্ধ গতিতে ট্রেন চলবে। কিন্তু সেতুর পর থেকে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের পটিয়া স্টেশনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি ট্রেন। যেটিতে রয়েছে ৬টি বগি ও ২ হাজার ২০০ সিরিজের একটি ইঞ্জিন। কোরিয়া থেকে আনা এসব বগির একেকটিতে ৬০ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-