মো. কামাল উদ্দিন, চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড উত্তর নোনাছড়ি এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মোঃ ইউসুফের পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ হারবাং হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার, সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং নাশকতাসহ অন্তত ৬টি মামলার আসামী জামায়াত নেতা মোঃ নুরুল আলমের নেতৃত্বে একটি কুচক্রীমহলের বিরুদ্ধে।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইউসুফের বড় সন্তান মোঃ শাহাজাহান সাংবাদিকদের জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার ক্লাস চলাকালীন সময়ে মাদ্রাসা ভবনের ২য় তলায় ফুটবল খেলছিলো দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র আলা উদ্দিন। খেলার এক ফাঁকে একই মাদ্রাসায় পড়ুয়া ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী সানিয়া আক্তারকে লক্ষ্য করে একটি বল ছুড়ে মারে। বলটি সানিয়া আক্তারের পায়ে লাগলে সে ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে উঠে এবং প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদ করার কারণে আলাউদ্দিন নামের ছেলেটি ফের ১টি ইট নিয়ে সানিয়ার পায়ে আঘাত করে।
পরে বিষয়টি ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী সানিয়া মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলমকে জানালে তিনি সানিয়াকে উল্টো বকাঝকা করেন। পায়ে ইট দিয়ে আঘাত করার কারণে সানিয়ার আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ব্যাথা মারাত্মক আকার ধারণ করলে মাদ্রাসা সুপারের কাছে কয়েকদফায় ছুটি প্রার্থনা করলেও তিনি সানিয়াকে ছুটি না দিয়ে উল্টো ঢং করার জায়গা পাওনা বলে পুনরায় বকাঝকা করেন।
এরপর মাদ্রাসা ছুটি হলে সানিয়াকে তার ৪ বান্ধবী মিলে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সানিয়া তার বাবা মোঃ শাহাজানকে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত বললে ততক্ষণাৎ শাহাজান মাদ্রাসা সুপারের সাথে যোগাযোগ করে এবং তার মেয়েকে অমানবিকভাবে হামলার বিচার চায়৷ কিন্তু মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলম সানিয়ার পিতা মো. শাহাজানকেও সমতালে কটু কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে শাহাজান প্রতিবাদ করলে তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকিও দেন বলে জানা যায় মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলম।
এবিষয়ে অভিযুক্ত হারবাং হামিদিয়া মাদ্রাসার সুপার নুরুল আলমের কাছে সাংবাদিকরা মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বক্তব্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেও শেষে সব কিছু অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, আমি ঘটনার বিষয়ে জানার পর সানিয়াকে ঔষধ নিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অপর ছাত্রকে প্রাথমিকভাবে শাসানো হয়েছে। এরপরও ছাত্র আলাউদ্দিনকে মারধর করেছে শাহাজান। সানিয়ার পা ভাঙেনি। তবে হালকা মচকে যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নেই।
এদিকে, মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলমের এমন দ্বায়সারা বক্তব্যের পর ঘটনার ব্যাপারে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি একই মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রী সানিয়াকে কী কারণে আলাউদ্দিন এমন অমানবিকভাবে আঘাত করেছে তা আমার বোধগম্য নয়। তবে, মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলম প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউসুফের বড় সন্তান মোঃ শাহাজাহান কর্তৃক যে ছাত্রকে মাদ্রাসায় গিয়ে মারধরের অভিযোগ তুলেছে আমি নিজে তদন্ত করে তার কোন সত্যতা পায়নি।
এমনকি, সানিয়ার পা ভেঙে দেওয়ার কথা শোনার সাথে সাথে উভয় পক্ষকে বসে মিমাংসা করার কথা বললেও মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলম কোন ধরনের সাড়া দেয়নি। পরে শুনেছি উল্টো মাদ্রাসা সুপারসহ গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে ফাঁসাতে চকরিয়া উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছে আলাউদ্দিন নামক ছাত্রকে মারধরের সাঁজানো নাটক সাঁজিয়ে।
অন্যদিকে, চেয়ারম্যানের এমন কথার ভিত্তিতে সাংবাদিকরা ঘটনার বিষয়ে জানতে চকরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান এবং সে বিষয়টি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও অবগত আছেন বলে জানিয়েছেন। এসময় তিনি আরো জানান, মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলম ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অবস্থান করার কারণে ঘটনার বিষয়ে এখনো কোন ধরনের তদন্ত করা হয়নি। ঘটনা তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
অপরদিকে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দেওয়া বক্তব্যের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ানের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি তা সত্য। তবে, এ ব্যাপারে তদন্ত করে দেখার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে উভয়পক্ষকে নোটিশ দিয়ে ডেকে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
উল্লেখ্য বলে রাখা ভালো- বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইউসুফ বেঁচে থাকাকালীন সময়ে মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটুক্তি ও বঙ্গবন্ধুর ফ্রেমবন্ধী ছবি মাটিতে ফেলে রাখার কারণে মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। পরবর্তীতে অদৃশ্য কোন কারণে এ মামলা থেকে অব্যহতি পান তিনি।
কিন্ত, তার মনের ভিতর জমে থাকা ক্ষোভ মিটাতেই তখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মো. ইউসুফের পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে আছেন মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলমের নেতৃত্বে একটি কুচক্রীমহল। এছাড়াও এ মাদ্রাসা সুপার নুরুল আলমের বিরুদ্ধে সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী এবং নাশকতার ব্যাপারে অন্তত ৬টি মামলা চলমান রয়েছে।
যার ১৬/০২/২০১৩ এর জি.আর মামলা নং- ৭৫, ০৭/১০/২০১৩ এর চকরিয়া থানার মামলা নং- ১১/৪৩৯, ২৭/০৭/২০২১ এ চকরিয়া থানার মামলা নং- ৩০/৩৩০, চকরিয়া থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা নং- ২৭, ১৬/০৮/২০২৩ এর জি.আর মামলা নং-৩৯৮, চকরিয়া থানার মামলা নং- ২৮, ১৬/১০/২০২৩ এর জি.আর মামলা নং-৩৯৯। কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী এবং নাশকতাসহ ৬টি মামলার আসামী হওয়ার পরও তিনি মাদ্রাসার সুপার হিসেবে রয়েছেন বহাল তবিয়তে? একটি এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে ৬টি জঘন্যতম অপরাধের মামলা থাকার পরও কীভাবে সে মাদ্রাসা সুপার হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছে এমন প্রশ্ন জনমনে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-