এনজিও কর্মী থেকে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি, অতঃপর কোটিপতি

শাহেদ ফেরদৌস হিরু, কক্সবাজার •

কয়েক বছর আগেও এনজিওতে চাকরী করতেন সোহেল আহমদ বাহাদুর। এরপর হঠাৎ করে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি বনে যান সাবেক এই ছাত্র ইউনিয়ন নেতা।

সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জমি দখল, তদবির বাণিজ্য, কমিটির পদ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। এই টাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা। ক্রয় করেছেন একাধিক গাড়ি। বিনিয়োগ করেছেন দেশের বাইরেও।

অথচ সোহেল আহমদ বাহাদুর জেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগেও দৃশ্যমান কোন কিছু ছিল বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। সর্বশেষ গত দুই মাস আগে বিভিন্ন অভিযোগের ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের কমিটি। তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা স্বত্বেও তাকে কিভাবে জেলা যুবলীগের আহবায়ক করার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

জানা যায়, সোহেল আহমদ বাহাদুর এক সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। বাবা এডভোকেট নূর আহমদ ছিলেন জাসদের সভাপতি। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষেও অবস্থান নিয়েছিলেন তার বাবা। বাহাদুর যুবলীগের সভাপতি হওয়ার পরেও ছাত্র ইউনিয়নে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ছাত্র ইউনিয়নের অনেক নেতাকর্মীকে যুবলীগ বানানোর চেষ্টা করার অভিযোগও উঠেছিল।

অভিযোগ আছে, সোহেল আহমদ বাহাদুর যুবলীগের জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদকের পদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও যুবলীগ পদপ্রত্যাশী নেতাদের কাছ থেকে। সরকারী ও বেসরকারি অফিসে তদবিরের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।

বাহাদুরের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়েছেন, দেশে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের পাশাপাশি বাহাদুর তার ভাগনী জামাই জাকির হোসেন জিকুর মাধ্যমে সৌদিআরবের “নামা আল আসরিয়া” নামের একটি হোটেলে বিনিয়োগ করেছেন কয়েক কোটি টাকা। এছাড়াও কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা এলাকায় যৌথভাবে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফ্রেশ সিমেন্ট কোম্পানীর এজেন্ট ব্যাবসাও পরিচালনা করছেন তিনি।

এছাড়াও, কলাতলী হোটেল লেগুনা বীচের পাশে একটি জায়গায় একাধিক মালিক থাকা স্বত্বেও শুধুমাত্র এক পক্ষের কাছ থেকে চুক্তিনামা নিয়ে গত ৫ বছর ধরে দখল করে দুইটি কটেজ, রেস্টুরেন্ট ও ছয়টি দোকান নির্মাণ করেছেন তিনি। আবার সেগুলো বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে আদায় করছেন লাখ লাখ টাকা। কয়েকজন ভাড়াটিয়া বাহাদুরের সাথে চুক্তির বিষয়টি প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন।

জানাগেছে,যুবলীগের সভাপতি হওয়ার পর গাড়ি কটেজসহ কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন বাহাদুর। তার একটি গাড়িতে ঢাকা-৬৬৮ শ নামের ভূয়া নাম্বার প্লেইট লাগানো হয়েছে বলেও জানা গেছে। এছাড়াও তার রয়েছে কক্স বে নামে দুইটি কাভার্ড ভ্যান। যার রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ঢাকা মেট্রো ১২-০২৯৮ ও ঢাকা মেট্রো ১২-০২৯৯। কলাতলী কটেজ জোনে এস এ কটেজ নামে রয়েছে একটি নিজস্ব কটেজ। গ্রীন হাউস ও সাগর কন‌্যা নামে দুইটি রিসোর্ট। স্বাদঘর নামে একটি রেষ্টুরেন্ট। ছয়টি দোকান। কক্সবাজার টেকনাফ রোডে কফিল উদ্দিন নামের এক যুবলীগ নেতার মাধ্যমে কোটি টাকা মূল্যের বুলবুল এক, দুই, তিন ও চার নামের চারটি মিনিবাসও পরিচালনা করছেন তিনি।

জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলা যুবলীগের এক সময় খুব ভালো অবস্থান ছিল। সোহেল আহমদ বাহাদুর দায়িত্ব নেওয়ার পর যুবলীগ বাহাদুর লীগ হয়ে গিয়েছিল।তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিগত পাচঁ বছর‌ পর্যন্ত একটি ওয়ার্ড কমিটিও গুছাতে পারেননি। নিজেদের কমিটিটা পর্যন্ত পূর্নাঙ্গ করতে পারেনি। আগে যারা যুবলীগ করেছে সদ‌্য সাবেক সভাপতির কার্যক্রমে হতাশ সবাই। সংগঠনের পেছনে সময় না দিয়ে টাকার পেছনে ছুটেছেন তিনি। এমন হয়ে গিয়েছিল যে,টাকা যেখানে সভাপতি সেখানে। বাহাদুর পূনরায় কক্সবাজার জেলা যুবলীগের আহবায়ক হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন খবরটি জানতে পেরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চরম হতাশা ব‌্যক্ত করেন। এবং প্রতিবেদেক কে জানান, এত অভিযোগ স্বত্বেও যদি বাহাদুরকে পূনরায় কক্সবাজার যুবলীগের আহবায়ক করা হয়,তাহলে কক্সবাজার‌ থেকে যুবলীগ চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যাবে।

অভিযোগের বিষয়গুলো ষড়যন্ত্র ও ভিত্তিহীন দাবী করে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আহবায়ক প্রার্থী সোহেল আহমদ বাহাদুর বলেন, কেন্দ্রে অনেকেই অভিযোগ দিতে পারে। সব অভিযোগ সত্যি হবে এমনটি নয়। কেন্দ্রে যদি কেউ অভিযোগ করে তাকে তাহলে নিশ্চয়ই তারা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করবে। আপনাদের গনমাধ্যমের কাছেও যদি কোন অভিযোগ আসে তা যাচাই-বাছাই করে সত্য প্রমাণিত হলে লিখলে কোন সমস্য নাই বলেও জানান তিনি।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের কমিটির জন্য যে সিভিগুলো পেয়েছি তা যাচাই-বাছাই চলছে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হলে শীঘ্রই কমিটি দেওয়া হবে। নতুন কমিটিতে কারা আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুবলীগের এবারের কমিটিতে ফ্রেশ, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।

নিউজ/সকালের সময়

আরও খবর