বিশেষ প্রতিবেদক •
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু-বাইশফাঁড়ি-তুমব্রুপশ্চিমকুল সীমান্ত দিয়ে চালানে চালানে আসছে গরু, মহিষ, বিদেশি মদসহ চোরাইপণ্য। আর এসব পাচারকাজে
জড়িত ২০ কারবারি আর ৫ গড়ফাদার।
যারা এলাকায় অতি পরিচিত মুখ বা সীমান্তের এ পয়েন্টে আইন-শৃঙ্খলার কাজে কাজ করছেন এমন সদস্যদের সহযোগী বলে পরিচয় দেন সুযোগ বুঝে। আর চক্রটি সোমবার এ ধরণের ১টি চালান মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে পার করে বাংলাদেশের সীমান্ত বাজারে নিয়ে যাওয়ার সময় বাইশফাঁড়ি বিওপি জব্দ করেন ১৫ টি বার্মিজ গরু। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের।
সূত্র আরও জানান, বাংলাদেশ-সীমান্তের ৩১ নম্বর পিলার থেকে ৫৬ নম্বর পিলারের দীর্ঘ প্রায় ৯২ কিলোমিটার সীমান্তে মাত্র ১৫ টি পয়েন্ট দিয়ে চোরাকারবার চলে।
আলোচিত পয়েন্টের মধ্যে ঘুমধুম নয়াপাড়া,তুমব্রু পশ্চিমকূল, তুমব্রু কোনার পাড়া ও বাইশফাঁড়ি পয়েন্ট ঘুমধুম ইউনিয়ন এলাকায়।
এ পয়েন্টগুলো দিয়ে ২৪ ঘন্টায় তাদের সুবিধামতো সময়ে মিয়ানমার থেকে হরেক রকম চোরাইপণ্য বাংলাদেশে পাচার করে নিয়মিত। যে পণ্যগুলো সীমান্ত বাজারসহ কক্সবাজারে সয়লাব।
বাইশফাঁড়ি গ্রামের আবদুর রহিম ও ছৈয়দ নূর ( ছদ্মনাম) এ প্রতিবেদককে বলেন, তুমব্রু-বাইশফাঁড়ি ও তুমব্রুপম্চিমকূল পয়েন্ট এখন চোরাকারের স্বর্গরাজ্য। প্রতিদিন এ তিন পয়েন্ট দিয়ে গরু, মহিষ, ইয়াবা, স্বর্ণ মেথ, রিচকপি,বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট, লুঙ্গি থামী,বিদেশী মদ,কসমেটিক সামগ্রী, সুপারী ,শার্ট,গেঞ্জি ,সেন্ডেলসহ বিভিন্ন পণ্য পাচার হচ্ছে রাতের আঁধারে। সুযোগ পেলে দিনেও হয়। বিশেষ করে রাত ২ টা থেকে ভোর ৬ টায় আর সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টায় এ সব পাচারকার্য চলে।
তারা বলেন, এ তিন পয়েন্টে চোরাচালান কাজে সরাসরি জড়িত ৪০ কারবারি। তাদের জন্যে বিপদের বন্ধু আছে ৪ জন। যারা এলাকায় দানশীল ও জনসেবক হিসেবে পরিচিত। এছাড়া ৪ জন জনপ্রতিনিধি চোরাচালান কাজে সরাসরি জড়িত বলে গোয়েন্দা সূত্র গুলো জানান এ প্রতিবেদককে।
সূত্র দাবী করেন, কুতুপালং ক্যাম্প ও ঘুমধুম ইউনিয়নের হাবিবুর রহমান,রেজাউল করিম, মিজানুর রহমান, মন্টু, নাগু, ইসমাইল, মুস্তফিজ, ছেতাচিং, মো. আলী,শফিক, ইসলাম, রফিক, মিজান, শফি, মাহমদুল হক, শাহ জাহান, রুহুল আমিন, মফিজ ও জাহাঙ্গির প্রমুখ।
তারা জানান, এ সব ব্যক্তি দিনে সাধু আর রাত নামলেই তৎপর হন চোরাকারবারে। যাদের একাধিক সিন্ডিকেট গত ১ সপ্তাহে সীমান্তের ৩৬ পিলারের পার্শ্ববর্তী পয়েন্টে ৬ শতাধিক গবাদি পশু, মদ, ইয়াবা ও অন্যান্য সামগ্রী তুমব্রু খাল পার করে মক্কুর টিলা সংলগ্ন কাঠাল বুনিয়াঘোনা হয়ে পশ্চিমে কুতুপালং, উখিয়া, কোটবাজার বা মরিচ্যা বাজার নিয়ে গেছে।
যা প্রতিরাতে নিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্র দাবী করছে। তারা আরো জানান,এ পয়েন্ট গুলোতে বিজিবি তাদের তৎপরতা চালালেও বিরতির ফাঁকে ফাকে এ কারবার চালায় চোরাকারবারিরা।
আর তুমব্রু,বাইশফাঁড়ি ও তুমব্রুপম্চিম কূল পয়েন্টরসহ ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবার বেড়ে গেছে বলে গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মাসিক আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় অনেকে অভিযোগ করেন।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, আসলেও তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি সীমান্ত পয়েন্ট দু’টি এখন চোরাকারবারীদের জন্যে অনেকটা খোলা। প্রতিদিন এ পয়েন্ট দিয়ে গবাদী পশু, মদ, সিগরেটসহ নানা বার্মিজ পণ্য অবৈধপন্থায় এদেশে পাচার করছে। যা দেশের জন্য চরম ক্ষতি বয়ে আনছে।
এ বিষয়ে সীমান্তের এ পয়েন্টে দায়িত্বরত ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে, তিনি এখন মিটিং-এ আছেন। মিটিং শেষ হলে এ প্রতিবেদকের সাথে প্রয়োজনে কথা বলবেন।
তবে চোরাচালান প্রতিরোধ ও আইন-শৃংখলা রক্ষায় কাজ করেন এমন একাধিক সূত্র দাবী করেন তারা রাত-দিন চোরাচালান বন্ধে কাজ করছেন। তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জঙ্গালাকীর্ণ পথ বেয়ে চোরাকারবারীরা তৎপর।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-