আবদুল কুদ্দুস, কক্সবাজার •
নিম্নচাপ ও ঝোড়ো হাওয়ায় সাগর উত্তাল হলে ইলিশ শিকার বন্ধ থাকে। এ সময় কক্সবাজারে নোনা ইলিশের বিক্রি বাড়ে। ইতিমধ্যে এ জেলায় নোনা ইলিশের বিক্রি জমে উঠেছে। কক্সবাজার শহরে ৫০টির বেশি দোকানে এই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতেও নোনা ইলিশের বিক্রি বেড়েছে।
সাগরে ইলিশ ধরার পর ট্রলারেই বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। বরফসংকট অথবা অন্য কোনো কারণে ইলিশ পচে গেলে এর পেটে লবণ ঢুকিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়, যা নোনা ইলিশ নামে পরিচিত। কক্সবাজারে এটা নুইন্যা ইলিশ নামে পরিচিত।
মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর কক্সবাজারে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৩৯ হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন।
চলতি বছর জেলা ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে দৈনিক ২০০-৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হচ্ছে। গত ২০ দিনে আহরণ হয়েছে ১০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। বর্তমানে জেলার শতাধিক বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার নোনা ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে। তবে বছরে কতটি নোনা ইলিশ উৎপাদন হয়, সেই হিসাব মৎস্য বিভাগের কাছে নেই।
মাছ ব্যবসায়ীদের হিসাবে কক্সবাজার শহরের ৫০টির বেশি দোকানে দৈনিক বেচাবিক্রি হচ্ছে তিন হাজার নোনা ইলিশ।
টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালীতেও দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৩০০টি ইলিশ বেচাবিক্রি হচ্ছে। গত দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) জেলাতে বিক্রি হয়েছে অন্তত ২ লাখ নোনা ইলিশ। যার বাজারমূল্য ১২ কোটি টাকা।
কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দর সড়কে কানাইয়ার বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, তাজা ইলিশের পাশাপাশি নোনা ইলিশও কিনছেন মানুষ। শুঁটকি মাছ বিক্রির দোকান হাবিব শুঁটকি এন্টারপ্রাইজে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। ১ হাজার ২৩০ গ্রাম ওজনের একটি নোনা ইলিশ ৮০০ টাকায় কিনেছেন শহরের এন্ডারসন সড়কের ব্যবসায়ী আবদুল খালেক। তিনি বলেন, ‘নুইন্যা ইলিশের স্বাদ অন্য রকম। তবে রান্না জানতে হবে। এই মৌসুমে নুইন্যা ইলিশ খেতে হয়। অনেকে ফ্রিজে নুইন্যা ইলিশ সংরক্ষণ করে বছরজুড়ে খান।’
হাবিব শুঁটকি এন্টারপ্রাইজের মালিক হাবিবুর রহমান (৪৩) বলেন, দৈনিক গড়ে ৪৫টি নোনা ইলিশ বিক্রি হয় এই দোকানে। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তিনি ৪০টি নোনা ইলিশ বিক্রি করেছেন ৩২ হাজার টাকায়। দোকানে নোনা ইলিশ মজুত আছে ১ হাজার ৪০০টি। পাশের আরেকটি গুদামে বস্তা ভরে রাখা হয় আরও দুই হাজার নোনা ইলিশ। তিনি নোনা ইলিশ বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম নগরেও পাঠাচ্ছেন।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি নোনা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়, ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০-৬৫০ টাকা, এক কেজির বেশি ওজনের নোনা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়।
কক্সবাজার শহরের মগচিতাপাড়া, সৈকত সড়ক, কলাতলী সড়ক, টেকপাড়া বার্মিজ মার্কেট এলাকা, ঝাউতলা ও সুগন্ধা সড়কের অন্তত ১৫০টি দোকানে নোনা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত জুন মাসে এসব দোকানে দৈনিক দুই হাজার নোনা ইলিশ বিক্রি হয়েছিল। জুলাই মাস থেকে দৈনিক গড়ে ৫ হাজার নোনা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
শহরে বেশি নোনা ইলিশ উৎপাদন করে কক্সবাজার শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ৩৫০ জন সদস্য। সমিতির সদস্যরা গত কয়েক মাসে ২০ মেট্রিক টনের বেশি (প্রায় দেড় লাখ ইলিশ) নোনা ইলিশ উৎপাদন করেছেন। যার বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, এ সমিতির সদস্যরা প্রতিবছর ১২০ কোটি টাকা মূল্যের অন্তত ১০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন করে থাকেন। এর মধ্যে যেসব ইলিশ পচে খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে, তা নুন মিশিয়ে নুইন্যা ইলিশে পরিণত করা হয়। তবে নুইন্যা ইলিশ স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর, জানা নেই কারও। শত বছর ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে নুইন্যা ইলিশের কদর চলে আসছে।
সমুদ্রসৈকতসহ কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় রেস্তোরাঁ আছে পাঁচ শতাধিক। তবে এসব রেস্তোরাঁয় নোনা ইলিশ রান্না হয় না।
এ সম্পর্কে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বলেন, নোনা ইলিশের রান্না জটিল। অনেকে রাঁধতে জানেন না। নোনা ইলিশের স্বাদ এখনো বাসাবাড়িতেই সীমাবদ্ধ। তাঁর ধারণা অন্য খাবারের সঙ্গে নোনা ইলিশের ভর্তা পরিবেশন করা গেলে পর্যটকেরা লুফে নিতেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-