রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০ টাকার লোভ দেখিয়ে শিশু অপহরণ: আটক ৩

আবদুল্লাহ আল আজিজ, কক্সবাজার জার্নাল •

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া ৪ বছরের এক রোহিঙ্গা শিশুকে জীবিত উদ্ধার করেছে উখিয়া থানা পুলিশ। এ সময় অপহরণকারী চক্রের নারীসহ তিন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উদ্ধার শিশু মো. রায়হান (৪), সে ক্যাম্প-১৬ এ/১ ব্লকের আবু জাফর ও রেহেনা বেগমের পুত্র।

গ্রেপ্তারকৃত তিনজন হলেন, টেকনাফের মোছনী রেজিষ্টার্ড ক্যাম্প-২৬ এর সি ব্লকের মো. আমিনের পুত্র সাদেক হোসাইন (২৫), ও তারই আপন বোন রোকসানা (১৫) এবং একই ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদের পুত্র আমির ফয়সাল (২৩)। তাদের মধ্যে অপহরণ চক্রের মূল হোতা সাদেক হোসেন জামতলি বাজার সংলগ্ন জহুর আলমের বাসায় ভাড়া থাকতো।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উখিয়া (সার্কেল) মো. রাসেল।

এসয় তিনি বলেন, গত ৩০ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে অপহরণ চক্রের হোতা সাদেক ও ফয়সাল রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৬ থেকে ৪ বছরের এক শিশুকে ২০ টাকা লোভ দেখিয়ে অপহরণ করে টেকনাফের মুছুনী রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পিছনে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে শিশুটির উপর পাষবিক নির্যাতন চালিয়ে তার বাবা-মাকে কান্নার শব্দ শুনিয়ে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করেন এবং না দিলে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকি দেন তারা।

এমতাবস্থায় কোনো উপায় না পেয়ে উখিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগীর মা রেহেনা বেগম। এরপর তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জড়িতদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে উখিয়া ও টেকনাফ থানার চৌকস আভিযানিক দল দুর্গম পাহাড়ে ঢালে বিভিন্ন ঝুপড়ি ঘরে শিশুটির সন্ধানে অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং দিনের বেলা ড্রোনের মাধ্যমে পাহাড়ের উপর থেকে অনুসন্ধান করা হয় দুর্বৃত্তদের অবস্থান।

অবশেষে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী সাদেককে জামতলী থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার দেখানো মতে মুছুনী ক্যাম্পের সি ব্লক থেকে অপহরণ চক্রের আরেক সদস্য তার বোন রোকসানার কাছ থেকে রায়হানকে উদ্ধার করা হয়।

আটককৃত তিন আসামি

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, রায়হানের বাবা-মা রোহিঙ্গাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ৪৫ হাজার টাকা ৭০০ টাকা মুক্তিপণ জোগাড় করে তাদের ছেলেটিকে উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু এই টাকায় তারা রায়হানকে ছেড়ে দিতে রাজিও হয়নি।

এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সম্পূর্ণ ঘটনা স্বীকার করেছেন।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, এক অসহায় পিতা-মাতাকে তাদের অপহৃত শিশুকে হস্তান্তর করতে পেরে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে এবং খুবই ভালো লাগছে। পিতা-মাতা তাদের ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এরুপ অপহরণকারী চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক একটি রোহিঙ্গা অপহরণকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদশী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করে যাচ্ছে। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও শত চেষ্টার পরও তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না।

আরও খবর