ঋত্বিক নয়ন •
ইয়াবা, আইসের পর স্রোতের মতো হেরোইন ঢুকছে চট্টগ্রামে। সবকটি একই কায়দায় সড়কপথে বাসযোগে নেয়া হচ্ছিলো।
তবে কেউ ধরা না পড়ায় এসব হেরোইনের উৎস ও গন্তব্য এখনও অজানা। চট্টগ্রামকে রুট মেনে টেকনাফ থেকে আসছে ইয়াবা, আইস। একই ভাবে চট্টগ্রামকেই ট্রানজিট রুট করে ঢুকছে হেরোইন গাঁজা ও ফেনিসিডিল।
মাদক কারবারিরা হেরোইন পাচারের জন্য নিরাপদ সড়ক হিসেবে ব্যবহার করছেন ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশ। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশ থেকে গত তিন মাসে আনুমানিক সাত কোটি টাকা মূল্যের হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ধরলে আটকের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে টাকার অংকও। মজার বিষয় হচ্ছে সীতাকুণ্ড অংশে হেরোইন উদ্ধারের মূল কান্ডারি ল্যাব্রাডর প্রজাতির একটি কুকুর, যার নাম রাণী। সে এতটাই ট্রেনিং প্রাপ্ত যে যেকোনো মাদকের ঘ্রাণ শুঁকে মাত্র ২/৩ মিনিটে সে বলে দিতে পারে কোথায় মাদক আছে।
চট্টগ্রাম মেট্রো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ পরিদর্শক জাহিদ হাসান বলেন, বাংলাদেশকে এখানে চোরাচালানের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নাকি বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছে সেটিই তদন্ত করছি আমরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী বিএমএ গেট এলাকায় ঝিনাইদহ থেকে আসা বাস থেকে ১ কেজি ১শ গ্রাম পরিমাণের হেরোইন উদ্ধার করা হয়। তবে জব্দ হেরোইনের মালিককে পাওয়া যায়নি। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে বিজিবি এ পর্যন্ত ছয়বার যাত্রীবাহী বাসে অভিযান চালিয়ে হেরোইন জব্দ করেছে। এভাবে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে একাধিকবার হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্কিত যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ।
হেরোইন উদ্ধার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অভিযানে নেতৃত্বদানকারী চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়নের (৮ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী বলেন, সন্দেহজনক বাসটিকে থামানোর পর গলায় বেল্ট বাঁধা প্রশিক্ষিত কুকুর রাণীকে নিয়ে বাসে উঠেন বিজিবির সদস্যরা। মাদক খুঁজে বের করতে দক্ষ রাণী বাসের পেছন দিকে রাখা কালো একটি ব্যাগ শনাক্ত করে। পরে সেই ব্যাগটি তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় ১ কেজি ১১৬ গ্রাম হেরোইন। যার বাজারমূল্য ২২ লাখ টাকা। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
২৮ আগস্ট সকালে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি অভিযান চালিয়ে কঙবাজার–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কঙবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা বাংলা বাজার এলাকায় ঢাকা থেকে কঙবাজারগামী যাত্রীবাহী একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে মালিকবিহীন ৩ কেজি ১৪৭ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে। এর আগে একই কায়দায় কক্সবাজারে হেরোইন পাচারের সময় বাস তল্লাশি চালিয়ে ২ কেজি হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছিল। কঙবাজার ব্যাটালিয়ন ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বাস থেকে হেরোইন ভর্তি ব্যাগ উদ্ধার করা হলেও এর মালিক কে কেউ স্বীকার করেনি।
গত ৯ জুলাই বিকেল ২টার সময় ভাটিয়ারী ইউনিয়নের মিক্কো পেট্টোলপাম্প সংলগ্ন এলাকায় প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে ‘হানিফ পরিবহন’ নামের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় এক কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন। উদ্ধারকৃত হেরোইনের দাম আনুমানিক দেড় কোটি টাকা।
গত ১৪ জুন বুধবার রাতে গাজীপুর থেকে আসা শ্যামলী পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাস চট্টগ্রামের এ কে খান মোড়ে পৌঁছালে তল্লাশি চালায় বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের যৌথ টিম। এক পর্যায়ে বাসে থাকা কালো একটি ব্যাগে পাওয়া যায় আটটি প্যাকেটে লুকানো দেড় কেজি হেরোইন। যার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। তবে ধরা যায়নি কাউকে।
৯ জুন সোনাইছড়ি ইউনিয়নের তেঁতুলতলা এলাকা থেকে দুই কেজি হেরোইন উদ্ধার করেছে বিজিবি। এর এক সপ্তাহ আগে ৩ জুন ভাটিয়ারী বাজার এলাকা থেকে আরও এক কেজি হেরোইন উদ্ধার করে। তবে কোনো ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়নি জড়িত ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়নের (৮ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী আরও বলেন, বাসে থাকা সব যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে হেরোইনের মালিক কে ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগেও মহাসড়কে একাধিকবার হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মাদক কারা পাচার করছে, তা জানতে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ভয়ংকর এসব মাদক কে বা কারা বহন করছিলো তা জানেন না গাড়িতে থাকা যাত্রীরাও। কয়েকজন যাত্রী বলেন, চেক করতে করতেই বিজিবি সদস্যরা একটি কালো ব্যাগে এসব পেলেন।
সীতাকুণ্ড সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, শ্যামলী পরিবহনের বাসটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। ওই হেরোইন পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা তো হতভম্ব হয়ে গেছি। বাসের ওরা পথে অনেক লোকাল যাত্রীকেও তুলেছে। কে তুলছিলো এখন এটা বোঝা কঠিন।
বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে হেরোইন বাইরে পাচার হচ্ছে। ষষ্ঠবারের মত হেরোইন জব্দ করা হয়েছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে বারবার হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্কিত যাত্রীরা।
এ বিষয়ে বিজিবি চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী বলেন, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে হেরোইন নিয়ে আসার গোপন খবরের সূত্র ধরে ভাটিয়ারী বিএমএ গেট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসটি থামানো হয়। পরে বাসে তল্লাশি চালিয়ে একটি কালো ব্যাগ থেকে ১ প্যাকেট হেরোইন পাওয়া যায়। যার ওজন ১ কেজি ১শ গ্রাম। এই হেরোইনের বাজারমূল্য ২২ লাখ টাকা। জব্দ হেরোইনের মালিককে পাওয়া যায়নি।
ইউএনও কেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, মূলত রাত ৩টা থেকে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এসব মালামাল আটকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বিজিবি সদস্যরা। তাদের কাছে এমন তথ্য ছিলো যে কোনো সময়ে এসব মালামাল এই এলাকা অতিক্রম করবে। টার্গেট করা গাড়িটি এসেছে সকাল ৯টার দিকে ভাটিয়ারী এলাকায়। এরপর বিজিবির প্রশিক্ষিত কুকুর হেরোইনের ব্যাগটি শনাক্ত করলে তারা এসব হেরোইন জব্দ করেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-