চকরিয়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে তেলেসমাতি, নেপথ্যে কারা!

মো. কামাল উদ্দিন, চকরিয়া •

প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কয়েকজন ডিলারের বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছে সুফলভোগীরা। এছাড়াও চকরিয়া ও পেকুয়া ২টি উপজেলার ২৫ টি ইউনিয়নের ৪৫ জন ডিলারের প্রায় সকলের অভিযোগ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস ও খাদ্য গুদাম সংশ্লিষ্ট ওসি এলএসডি ও ট্যাগ অফিসারের বিরুদ্ধে। একে অপরকে দুষলেও ভোগান্তিতে পড়ছে সুফলভোগীরা। এসব নিয়ে সরকারের গণমুখী এ কর্মসূচি হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ!

প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অধীনে চকরিয়া উপজেলায় ১৩ হাজার ১২৫ টি ও পেকুয়া উপজেলায় ১০ হাজার ১২৫ টি হতদরিদ্র পরিবার সুফল ভোগ করছে। সুফলভোগীরা অভিযোগ করেন, ডিলাররা নানা অজুহাতে আমাদের ভোগান্তিতে ফেলে। ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি চালের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৪৫০ টাকার স্থলে ৪৮০ টাকা নেয়। বস্তা ফেরত না দিলে আরও ৩০ টাকা হারে আদায় করে। তবে এ অভিযোগ ঢালাওভাবে ৪৫ ডিলারের বিরুদ্ধে নয়।

‘আর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা তপন মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ; খাদ্য অফিসে ডিলাররা মাল ছাড়ানোর ছাড়পত্রের জন্য এলে চালের প্রতি টনে অবৈধভাবে ৫০০ করে আদায় করেন।

এদিকে চকরিয়া উপজেলা ওসিএলএসডি (খাদ্য গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) নাসির উদ্দিনের কাছে ডিলাররা চালের জন্য গেলে তাকে প্রতি ডিলারকে দিতে হয় ৫০০ করে। খাদ্য গুদামের কর্মচারী নুরুল আলম ও নিখিল এই টাকা আদায় করে বলে জানান ডিলাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ডিলার অভিযোগ করেন, উপজেলা খাদ্য অফিস, ওসি এলএসডি, খাদ্য গুদাম ও ট্যাগ অফিসারদের সন্তুষ্ট করতে গিয়ে অসাদুপায় অবলম্বন করা ছাড়া উপায় থাকে না। ডিও লেটার নিতে খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করতে এবং মাষ্টার রোলে স্বাক্ষর নিতে ট্যাগ অফিসারকে টাকা না দিলে পদে পদে হেনস্তার শিকার হতে হয়। টনপ্রতি খাদ্য অফিস এবং খাদ্য গুদামে মাল ছাড়াতে হলে ৫’শ করে দিতে হয় এবং ভোক্তা কার্ড ছাড়াতে এলে খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দিতে হয় জনপ্রতি ১’শ থেকে ২’শ টাকা। খাদ্য গুদামের শ্রমিকদেরও টাকা দিতে হয়, না হয় বোংগা মেরে বস্তা থেকে চাল নেয়; এমনকি ওজনেও কম দেয়।

সুনির্দিষ্ট নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে চকরিয়া পৌর এলাকার বিদ্যাপীঠ বিজয় মঞ্চ সংলগ্ন রশিদ আহম্মদ ডিলার, উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী এলাকার মামুনুল গণি ডিলার ও রামপুরের আলি হোসেন ডিলারের বিরুদ্ধে।

একজন ডিলার ৬ টনের বেশি চাল নেওয়ার নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও পৌর এলাকার রশিদ আহম্মদ ডিলার নিচ্ছে ২০ টন চাল। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিকের সাথে সখ্যতা থাকায় অতিরিক্ত চাল নেন তিনি। বস্তা সহ স্থানীয় বিভিন্ন চাল ডিলারের কাছে চাল বিক্রি ও উপকারভোগীদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে রেখে চাল না দিয়ে হয়রানি সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সাহারবিল ইউনিয়নে এক ডিলারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ও অন্য ডিলারের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নবী হোসাইন চৌধুরী। লিখিত অভিযোগে সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী ডিলার মামুনুল গণির বিরুদ্ধে ওজনে কম দেওয়া ও উপকারভোগীদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে রেখে চাল না দেয়া,স্বজনপ্রীতি সহ বিভিন্ন অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বরাবরে।

এদিকে ইউনিয়নের রামপুর এলাকার আলি হোসেন ডিলারের বিরুদ্ধেও রয়েছে এসব অভিযোগ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে চকরিয়া উপজেলা ওসিএলএসডি (খাদ্য গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) নাসির উদ্দিন বলেন; টাকা ছাড়া মাল উঠাবেনা তো গোদামের শ্রমিকরা। এটা সরকারি আইন। কিন্তু ডিলার প্রতি ৫’শ করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করা হলে রিসিভ করেননি তিনি।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা তপন মল্লিক জানান, তাদের কাজের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন অনৈতিক স্বার্থ আছে। নয়তো আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করার কথা না। আগামী বৃহস্পতিবার আপনার সাথে বসে কথা বলবো।
কার্ড ছাড়াতে এলে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেপি দেওয়ান বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আরও খবর