বিশেষ প্রতিবেদক •
কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসছে খাওয়ার উপযোগী আরো একটি নতুন জাতের জেলিফিশ। স্থানীয়ভাবে ‘গেলাস নুইন্না’ নামে পরিচিত এই জেলিফিশটি অরেলিয়া অরিটা প্রজাতির বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা জানান, গত প্রায় দেড় মাস ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন সৈকতে ‘গেলাস নুইন্না’ নামে পরিচিত অরেলিয়া অরিটা প্রজাতির এই জেলিফিশটি ভেসে আসতে দেখা যাচ্ছে।
সৈকতের বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুব আলম জানান, গতমাসে ও চলতি মাসে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট, সমিতিপাড়া পয়েন্ট ও শৈবাল পয়েন্টে নতুন জাতের মরা জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখা যাচ্ছে। যেগুলো স্থানীয়ভাবে ‘গেলাস নুইন্না’ নামে পরিচিত। গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা সোনারপাড়া সৈকতেও একই জাতের জেলিফিশ দেখতে পান বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।
দরিয়ানগর বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আলম জানান, গত মাসাধিককাল ধরে জেলেদের জালে ‘গেলাস নুইন্না’ প্রজাতির জেলিফিশটি বেশি আটকা পড়ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও সমুদ্রবিজ্ঞানী ড. আশরাফুল হক জানান, বিশ্বে প্রায় ২৫০০ প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে। এরমধ্যে ১২ প্রজাতির জেলিফিশ খাওয়ার উপযোগী, যারমধ্যে একটি হল অরেলিয়া অরিটা (অঁৎবষরধ ধঁৎরঃধ)। যেটি মাস দেড়েক ধরে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসতে দেখা যাচ্ছে।
এরআগে চলতি বছর এপ্রিল মাসে ‘ক্রেম্বায়োনেলা’ বা ‘বল নুইন্না’ জাতের এবং গত বছর আগস্ট, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে লবণেমইডস রোবাস্টাস বা ‘ধলা নুইন্না/বর নুইন্না’ জাতের জেলিফিশ ভেসে এসেছিল। আর ওই দুটোও খাওয়ার উপযোগী বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
অথচ আমাদের দেশে খাদ্য হিসাবে জেলিফিশের প্রচলন নেই বলে জেলেরা তাদের জালে ধরা পড়া জেলিফিশগুলো সমুদ্রেই ফেলে দেয়। পরবর্তীতে সেই মরা জেলিফিশগুলো জোয়ারের সাথে সৈকতে ভেসে আসে এবং পোকা মাকড়ের খাদ্য হয়। বিশ্বের বিভিন্ন সৈকতে জেলিফিশ একটি আতংকের নাম।
তবে কক্সবাজার সৈকতে কখনও জেলিফিশ নিয়ে আতংকের ঘটনা শোনা যায়নি। এখন সেই জেলিফিশ নিয়ে দেশের সুনীল অর্থনীতিতে নতুন দুয়ার তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি জেলিফিশের দাম ১০ ডলার বা প্রায় ১১শ টাকা। আর বিশ্বে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে জেলিফিশের। আর সেই জেলিফিশের শেষ পরিণতি কী না সৈকতের পোকা–মাকড়ের খাদ্য হিসাবে!
তিনি বলেন, শত শত বছর ধরেই সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসছে মরা জেলিফিশ। একসময় এই মরা জেলিফিশ বা নুইন্না জমা হতো শহরের উত্তরাংশে বাঁকখালী নদী ও সমুদ্র মোহনার চরে।
আর সেই ‘নুইন্না’ থেকেই শহরের বিমানবন্দর সংলগ্ন ২নং ওয়ার্ডের নামকরণ হয়েছে নূনিয়ারছড়া, যা স্থানীয়ভাবে নুইন্নাছড়া নামে পরিচিতি পেয়েছে। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেলিফিশ থেকে তৈরি হচ্ছে সার, কীটনাশক, ওষুধ ও কসমেটিক্সসহ নানা পণ্য।
এশিয়ার কিছু অঞ্চলে, জেলিফিশ হাড় ও পেশীর ব্যথা কমানোর ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। জেলিফিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশও প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করতে পারে। যা সুনীল অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-