শেখ শাহরিয়ার জামান •
ছয় বছর হলো রোহিঙ্গা ঢলের। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গণহত্যা ও নির্বিচারে নির্যাতন চালানোর পর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
এর আগে থেকেই অন্তত তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। বর্তমানে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের বিরোধিতার কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি। কবে তারা নিজেদের বাসভূমি রাখাইনে ফেরত যেতে পারবে সেটি এখনও অনিশ্চিত। সব পক্ষ, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের বিরোধিতা না থাকলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হতো।
বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় মেকানিজমের অধীনে এ বছর সাত হাজার রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর একটি পাইলট প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে। কিন্তু কবে প্রত্যাবাসন শুরু হবে সেটি এখনও ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, গত জুনে পাইলট প্রকল্পের অধীনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা থাকলেও সেটি করা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, অল্প সংখ্যক হলেও প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য।
এ বিষয়ে বিভিন্ন মহল বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের বিরোধিতা আছে এবং এ অবস্থায় প্রত্যাবাসন শুরু হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোটা প্রক্রিয়াটি স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে হবে। রোহিঙ্গারা যদি যেতে রাজি থাকে তবে তাদের বাধা দেওয়া যাবে না।
পাইলট প্রকল্প
চীনের উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পাইলট প্রকল্প নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা চলছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যদি কোনও অসুবিধা থাকে সেগুলো চিহ্নিত করা।
এ বিষয়ে আরেকটি সূত্র বলেন, ‘রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যাবে এবং তাদের নিরাপত্তা, জীবিকা ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। যদি ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বা জীবিকা বা অন্য কোনও অসুবিধা হয়, তবে তারা ফেরত আসতে পারবে।’
পশ্চিমা বিশ্বের বিরোধিতা
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক সমর্থন প্রথম থেকে কম ছিল। এখন তারা বলছে রাখাইনে পরিবেশ অনুকূল নয় এবং তাদের ফেরত না পাঠানোর জন্য।
এ বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব প্রকাশ্যে বলছে। এমনকি জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাও প্রত্যাবাসনের বিরোধী অবস্থান নিয়েছে, যা তারা নিতে পারে না।
তিনি বলেন, তাদের কাজ হচ্ছে প্রত্যাবাসনের সময় সহায়তা করা এবং মিয়ানমারে পরিবেশ উন্নতি করা। কিন্তু সে বিষয়ে তাদের আগ্রহ কম।
আরেকটি সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত অনেক এনজিও রোহিঙ্গাদের ভুল পথে পরিচালিত করে। যেমন নাগরিকত্বের বিষয়টি প্রত্যাবাসনে বিবেচিত হবে না কারণ সেটি একান্তই মিয়ানমার সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ মিয়ানমারকে বলতে পারে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে, কিন্তু তাদের নাগরিকত্ব দিতে বলতে পারে না।
তিনি বলেন, কিন্তু অনেক এনজিও এর প্ররোচনায় রোহিঙ্গারা দাবি করছে তাদের নাগরিকত্ব না দিলে তারা ফেরত যাবে না।
রাখাইন পরিস্থিতি
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ থাকতে হবে। বর্তমানে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাখাইনে শক্তিশালী আরাকান আর্মি– উভয়ই প্রত্যাবাসনের পক্ষে।
এ বিষয়ে আরেকটি সূত্র জানায় যে আমাদের তথ্য মতে রাখাইনে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। রাখাইনে আরাকানিরা সবচেয়ে বড় গ্রুপ এবং প্রত্যাবাসনে তাদের কোনও আপত্তি নেই।
তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-