ডয়চে ভেলে •
পুলিশের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টফাই রাইটস। তারা বলছে, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কক্সবাজারের বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি করছে।
বাংলাদেশের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্বিচারে আটক, চাঁদাবাজি এবং তাদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টফাই রাইটস।
সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ পুলিশ মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়েছে। এছাড়াও অনৈতিক ভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
পুলিশের এই ইউনিটটি ২০২০ সাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরণার্থী এবং মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছে, পুলিশি নির্যাতনের পাশাপাশি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে এপিবিএনের তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। কিছু শরণার্থী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, এপিবিএন অফিসার ও সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে যোগসাজশ রয়েছে।
ফোরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্মিথ বলেছেন, পুলিশ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদেরকে মানব এটিএমের মতো ব্যবহার করছে।
এবছরের শুরুর দিকে, আরেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), এপিবিএনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হয়রানির অভিযোগ এনেছিল।
এইচআরডব্লিউয়ের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পুলিশ সাধারণত গ্রেপ্তার এড়াতে ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং আটক পরিবারের সদস্যের মুক্তির জন্য ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দাবি করে থাকে। ঘুষ এবং মামলা চালানোর টাকা সংগ্রহে পরিবারগুলোকে প্রায়শই স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রি বা টাকা ধার করতে হয়।
এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এপিবিএন সদস্যদের ক্যাম্প পরিচালনার বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য শরণার্থী এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলোর গোষ্ঠীর সঙ্গে কর্তৃপক্ষের পরামর্শ করা উচিত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ক্যাম্পে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শরণার্থীদের অভিযোগ গ্রহণের জন্য প্রশিক্ষিত নন-এপিবিএন সদস্য রাখা উচিত।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন ডয়চে ভেলেকে (ডিডব্লিউ) জানান, এপিবিএন-এর তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এপিবিএন নানাভাবে দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সুরক্ষিত এবং নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কোনোভাবেই মানসিক বা শারিরীকভাবে নির্যাতন করা যাবে না।
উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে দুই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আসে। ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসে আরো ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলা গণহত্যা চালানোর পর বাংলাদেশে আসে আরো সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এদের সাথে আগে থাকা উল্লিখিতরা মিলে কক্সবাজার জেলা এখন ১০ লাখ রেহিঙ্গা শরণার্থীর আবাসভূমি। এদের ছয় লাখ এখন আছে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত কুতুপালং মেগা শিবিরে। আর এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।
(জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের হয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আরাফাতুল ইসলাম। কন্ট্রিবিউট করেছেন আবদুর রহমান, সম্পাদনা করেছেন শ্রীনিবাস মজুমদারু। এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের)
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-