বিশেষ প্রতিবেদক •
* প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি
* একাধিক মামলার আসামি
* তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ জরুরি
উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজলায় প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও জিম্মি করে টাকা আদায় করাসহ বিভিন্ন অপকর্মের মূলহোতা একাধিক মামলার আসামী ইউছুপ উরপে দালাল ইউসুফ এলাকায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, মাস-দেড়এক আগে নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া-টেকনাফে প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে এবং সোর্স পরিচয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল এমন অভিযোগে পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার হয়। সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আইনিপদক্ষেপ গ্রহণ করার আগেই কৌশলে পালিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে , দালাল ইউসুফ নিরহ মানুষদের জিম্মি করে কোটিপতি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা কিছুদিন আগে সংবাদ প্রকাশ করলে সে এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে চলে যায়। এখন আবার এলাকায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে।
ক্লাস ফাইভ পাস না করা ইউছুফ কখনো নিজেকে পুলিশ কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়ত উখিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও মাদকের কারবার চালিয়ে আসছিল । তার এসব কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কিছু কর্মকর্তাও জড়িত ছিল বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লোকে জানায়, ইউছুফ তার অপকর্ম ঢাকতে অনেকদিন ধরে নিজ এলাকার (তুমব্রু) বাইরে ছিল।
চাঁদাবাজির জন্য নিজ এলাকায় তিনি একাধিকবার মার খেয়েছেন। প্রশাসনের সোর্স পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও সীমান্তে চোরাচালানে লিপ্ত থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও পিটুনি খেয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানায়।
এরপর থেকেই এলাকার বাইরে থাকেন ইউছুফ। তার দালালির কারণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে তাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়ছিল।
প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে , ইউছুফের রয়েছে একাধিক স্ত্রী। বর্তমানে এক রোহিঙ্গা মেয়েকে বিয়ে করে উখিয়ার কুতুপালংয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকছেন। ওই রোহিঙ্গা মেয়ে তার তৃতীয় স্ত্রী। তার দ্বিতীয় স্ত্রীও রোহিঙ্গা। তিনি বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৭-এ অবস্থান করছেন বলে জানা যায়৷ তার প্রথম স্ত্রী তাদের বড় ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে চট্রগ্রামে থাকছেন। কুতুপালং বাজারে রয়েছে তার একাধিক দোকান। চাঁদাবাজি, হয়রানি ও মানুষকে জিম্মি করে ইউছুফ এ সম্পদ অর্জন করেন এমন মন্তব্য স্থানীয়দের। প্রশাসন এসব খতিয়ে দেখলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
শুধু তাই নই, বিগত দিনে ইউছুফ আলী ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশেরও দালালি করে আসছিলেন বলে জানিয়েছেন তার এক সহযোগী। দালালি এবং মানুষকে ব্ল্যাক-মেইল করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এই ইউছুফ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনের চালকও তার বিরুদ্ধে ‘হয়রানির’ অভিযোগ করেছেন। এই সেই ইউসুফ ফের ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে দালালিতে সক্রিয় হওয়ার জোর তদবির চালাচ্ছে বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রে জানা যায়, ইউছুফের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় তিনটি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় দুটি মাদক কারবার ও চোরাচালানের মামলা রয়েছে। এর মধ্যে উখিয়া থানায় ২০২১ সালের ১৬ মার্চ তারিখে (এফআইআর নং–২৬/১৭৯) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর (জিআর নং–৩৪০/১৪) এবং ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর (এফআইআর নং–২০/৬০৭) উখিয়া থানায় আরও দুটি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। বাকি দুটি নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ২০০৭ সালের ৮ মার্চ তারিখে (জিআরনং–৪২/০৭) বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং ২০১৫ সালের ২২ জুন (জিআর নং–১৩৮/১৫) তারিখে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউছুফ নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো।
তার এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টান্টু শাহা জানিয়েছেন, পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজির বিষয়টি তার জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, ইউছুফ পুলিশের কেউ নন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-