কক্সবাজারে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, পাহাড়ধসের শঙ্কা

কক্সবাজার প্রতিনিধি •

বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ছুটছেন ইউএনও পূর্বিতা চাকমা

দুদিনের টানা বর্ষণে কক্সবাজারের বাঁকখালী, চকরিয়ার মাতামুহুরী ও ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী নদীর পানি বেড়েছে। পাহাড়ি ঢলে মাতামহুরী ও বাঁকখালী নদীর একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার সদরের ১০ গ্রাম, মহেশখালীর ১৫, ঈদগাঁওর ১২ কুতুবদিয়ার ১৫, চকরিয়ার ২০, উখিয়ার ১০, রামুর ২০, পেকয়ার ১৫ ও টেকনাফের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে কৃষি ফসল ও চিংড়ি ঘের।

আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, শনিবার রাত থেকেই ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাত ১২ থেকে রোববার রাত ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৯৮ মিলিমিটার। বৃষ্টির তীব্রতা ১০ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড়গুলো কিছুটা আলগা হয়ে পড়ে।

বর্ষণে মাতামুহুরীর নদীর পানি বেড়ে চকরিয়া উপজেলার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, কোনখালী, ঢেমুশিয়া, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, সাহারবিল পুরোসহ একাধিক ইউনিয়নে জলাবদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ জানান, ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামায় মাতামুহুরীর বাঁধে প্রায় ১০০ ফুট মতো ভেঙে গেছে। ছিরাদিয়া পাউবো বেড়িবাঁধে ৫০ ফুটের মতো ভেঙেছে। পহরচাঁদা মাদরাসার সামনে বানিয়ারছরা-মগনামা সড়কের প্রায় ৩০০ ফুট এলাকায় রাস্তা উপচে পানি চলাচল করছে। উজানটিয়া-কমিরদাদ সড়কে পেকুয়া বাঁধে ৫০-৬০ ফুট ভাঙনের কবলে পড়েছে। এসব ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।

রাজাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল বলেন, বখশিয়াঘোনা বেড়িবাঁধে ১০০০ ফুটের মতো এলাকায় বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। যে কোনো মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে বাঁধের এ অংশটি। সোনালী বাজার সড়কের শতাধিক ফুট অংশের ওপর দিয়ে পানি চলাচল করায় ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, দুদিনের বর্ষণ ও জোয়ারে নদী ও সাগরে পানি বেড়ে বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে ১০-১২টি গ্রামে পানি ঢুকে অর্ধলাখের বেশি মানুষ জলমগ্ন। ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। ডুবে গেছে সড়ক-উপসড়ক। পানিবন্দি মানুষগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ হতে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। ফাটল ধরেছে বানৌজ শেখ হাসিনা ঘাটি সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা। পানিতে তলিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক মৎস্য ঘেরও।

রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরোয়ার কাজল জানান, বাঁকখালী নদীর পানি উপচে রামুর গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, কাউয়ারখোপ, জোয়ারিয়ানালা, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, রাজারকুল ও ফতেখাঁরকুলে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকছে। দক্ষিণ মিঠাছড়ি কাঠিরমাথায় পানি জমে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ঈদগাঁওর জালালাবাদ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ওসমান সরোয়ার ডিপো জানান, ইউনিয়নের লরাবাক এলাকায় বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেঙে ঢলের পানি ঢুকে গ্রামের বাড়িঘর পানিবন্দি হয়েছে।

মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু জানান, প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ধলঘাটার কয়েকটি গ্রামের সড়কের ওপর পানি ওঠে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ধানের বীজতলা, পানের বরজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, নিচু এলাকায় প্রতি বছর বন্যা দেখা দেয়। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবরকম প্রস্তুতি রয়েছে।

অতিরিক্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, পাহাড়ধস যতটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি মানবসৃষ্ট। পাহাড়ে বাড়ি বানানো বা অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার ফলে এ দুর্যোগ হয়। হঠাৎ বৃষ্টি এলে সমস্যা হয় না তবে কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হলে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ধসে পড়ে।

আরও খবর