কক্সবাজারে ৪ হাজার কোটি টাকার হোটেলের নকশা গায়েব

  • হোটেল শৈবালের জমির পরিমাণ ১৮৫ একর। 
  • জমির মোট দাম চার হাজার কোটি টাকার বেশি। 
  • হোটেলটি ইজারা দেওয়ার একটি উদ্যোগ ২০১৮ সালে সামনে আসে। তখন আন্দোলন হয়েছিল। 

আরিফুর রহমান, ঢাকা •

কক্সবাজারে পর্যটন করপোরেশনের হোটেল শৈবালের নকশা বা স্কেচম্যাপ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার গঠিত একটি কমিটি হোটেলটির বেদখল জমির হিসাব বের করতে নকশার খোঁজ করে। পরে জানা যায়, নকশা কোথাও নেই।

হোটেল শৈবালের নকশা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ঢাকায় পর্যটন করপোরেশনের সদর দপ্তরে থাকার কথা। কিন্তু দুটি দপ্তরের কোথাও নকশার খোঁজ পায়নি কমিটি।

বেদখল জমির হিসাব বের করতে গিয়ে নকশা গায়েবের বিষয়টি সামনে আসে সরকার গঠিত একটি তদন্ত কমিটির।

নকশা না পাওয়ায় হোটেল শৈবালের জমি আসলে কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে কি না, তা বের করা যাচ্ছে না। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সুযোগে আরও জমি বেদখল হতে পারে।

হোটেল শৈবালের জমির পরিমাণ ১৮৫ একর। এটি কক্সবাজার পৌরসভার বাহারছড়া এলাকায় অবস্থিত। জেলার ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, সেখানে প্রতি শতাংশ জমির মৌজা মূল্য প্রায় ২৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে হোটেল শৈবালের জমির দাম চার হাজার কোটি টাকার বেশি।

হোটেল শৈবালের ব্যবস্থাপক ও সরকার গঠিত কমিটির সদস্য রায়হান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শৈবালের সীমানা নির্ধারণ করা জরুরি। কারণ, জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য মূল নকশা খোঁজা হচ্ছে; কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, নকশা না পাওয়ায় তদন্তের কাজ তেমন এগোয়নি। না পেলে নতুন নকশা করতে হবে।

পর্যটন করপোরেশন ১৯৮৩ সালে হোটেল শৈবাল প্রতিষ্ঠা করে। এক সময় এটিই ছিল আকর্ষণীয় পর্যটন স্থাপনা। তবে দিনে দিনে এটি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। বিপরীতে বেসরকারি হোটেল ও রিসোর্টগুলো ভালো ব্যবসা করছে।

*তদন্ত বেশি দূর এগোয়নি। কারণ, শৈবালের আসল নকশার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।*
জাহিদ ইকবাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার

হোটেল শৈবালের জমি উদ্ধারের জন্য গত ২৭ মে সচিবালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় জানানো হয়, প্রতিষ্ঠার সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে প্রায় ৭৪ লাখ টাকা সালামি দিয়ে ১৮৫ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত নেয় হোটেল শৈবাল কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে ওই জমির নিয়মিত কর পরিশোধ করে আসছে পর্যটন করপোরেশন।

সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে হোটেল শৈবালের জমি থেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে ৫০ একর জমি দেওয়া হয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম করার জন্য। প্রায় ১৯ একর জায়গা সরকারি আরও কিছু সংস্থার দখলে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার জেলা পরিষদও। তারা সেখানে রিসোর্ট, দোকান ও রেস্তোরাঁ করেছে। কোনো স্থাপনার জন্য পর্যটন করপোরেশনের অনুমতি নেওয়া হয়নি।

আন্তমন্ত্রণালয় সভায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবালকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে কক্সবাজার জেলা পরিষদ, পর্যটন করপোরেশন, সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ ও হোটেল শৈবালের ব্যবস্থাপককে সদস্য করা হয়।

কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে, হোটেল শৈবালের জমি থেকে কোন সংস্থাকে কতটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা বের করা এবং জেলা পরিষদ ও পুলিশকে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে কি না, তা যাচাই করা। সরেজমিন তদন্ত শেষে সুচিন্তিত মতামতসহ এক মাসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন তৈরি করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

পর্যটন মন্ত্রণালয় ও করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নকশা গায়েবের পেছনে একটি চক্র কাজ করেছে। চক্রটি বেশ আগেই নকশা নিয়ে গেছে। তবে সেটি সামনে এসেছে অনেক পরে। নকশা না থাকায় এখন চাইলেও অন্যদের স্থাপনা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

কমিটি গঠনের দুই মাস পেরিয়েছে। তদন্তের কাজ কত দূর তা খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, কমিটি হোটেল শৈবালের নকশা খুঁজে পায়নি। এ কারণে কাজ এগোয়নি।

হোটেল শৈবালকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ ২০১৮ সালে সামনে আসে। তখন ইজারার বিরুদ্ধে কক্সবাজারে আন্দোলন হয়। পরে উদ্যোগটি বাতিল করা হয়।

পর্যটন মন্ত্রণালয় ও করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নকশা গায়েবের পেছনে একটি চক্র কাজ করেছে। চক্রটি বেশ আগেই নকশা নিয়ে গেছে। তবে সেটি সামনে এসেছে অনেক পরে। নকশা না থাকায় এখন চাইলেও অন্যদের স্থাপনা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

সরকার গঠিত কমিটির প্রধান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবাল বলেন, হোটেল শৈবালের জমিতে স্থাপনা করা সরকারি সংস্থার দাবি—ওই জমি তাদের। যখন জমিতে স্থাপনা করা হয় তখন কেউ বাধা দেয়নি কেন, তা একটি প্রশ্ন। বিষয়টি সব পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, তদন্ত বেশি দূর এগোয়নি। কারণ, শৈবালের আসল নকশার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও খবর