সরকারী উপবৃত্তির টাকা যায় প্রধান শিক্ষকের স্ত্রীর মোবাইলে

শাহী কামরান •


বাংলাদেশ সরকারের চলমান শিক্ষাখাতে উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান। এটি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি। যা নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগনের মোবাইলে আধুনিক ‘মোবাইল ব্যাংকিং’ এর মাধ্যমে হাতে হাতে টাকা পৌছে যায়। এভাবে দীর্ঘ বছর ধরে বর্তমান সরকার এই সেবা দিয়ে আসছে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলেও। কিন্তু সরকারের এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ ব্যাহত করছে কিছু টাকা লোভী স্বার্থানেস্বী দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

এমন ঘৃণিত ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে।

অভিযোগ উঠেছে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী সদ্য অযোগ্য ঘোষিত সাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। উখিয়ার ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ গফুর আলম নিজের মোবাইল নাম্বার ও নিজ স্ত্রী,এমনকি তার ঘনিষ্ট বেশ কয়েকজনের নাম্বারে উপবৃত্তির টাকা ঢুকে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের নাম্বারের পরিবর্তে পছন্দের নাম্বার দিয়ে উপবৃত্তির তালিকা করেছেন তিনি। সেই টাকা হাতিয়ে নেন সাবেক এই প্রধান শিক্ষক।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা খুবি গরীব ও হত দরিদ্র। পে-রোল রিপোর্ট অনুযায়ী প্রদত্ত সেইসব নাম্বারে বিগত-২০২০-২১ অর্থ বছর হতে শিক্ষার্থীদের জন্য আসা উপবৃত্তির টাকা নিয়মিত চলে যায়। উল্লেখ্য থাকে যে উক্ত স্কুল সদ্য এমপিওভূক্ত হয় । স্কুল এমপিও হওয়ার পর উক্ত শিক্ষক নীতিমালা অনুযায়ী অযোগ্য প্রমানিত হওয়ায় ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। উপবৃত্তি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বর্তমান প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই সাথে আরো কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন তাদের উপবৃত্তি দেওয়ার নাম করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে। এ ধরনের বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ ভোক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বরাবর অভিযোগ করেছেন। এমন অভিযোগের বেশ কয়েকটি তথ্য-প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে।

অভিযোগ পত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের উপবৃত্তি না পাওয়ার বিষয় উল্লেখ করেন ও সাবেক প্রধান শিক্ষকের নাম্বার ও তার স্ত্রীর এবং কাছের কয়েকজনের নাম্বার ব্যবহারের বিষয়টি নাম্বার সহ তুলে ধরেন। সে সাথে এসব ত্রুটি সংশোধনের আবেদন জানান।

অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, উক্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ গফুর আলম উপবৃত্তির তালিকায় নাম দিবে বলে ২০২৩ সনের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকেই প্রায় ১০৮ জন শিক্ষার্থী হতে হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার হাজার টাকা। সে সকল শিক্ষার্থীও তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিযোগ পত্রে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ গফুর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। এবং শিক্ষার্থীর অভিভাবকের নাম্বার না থাকায় ইমার্জেন্সি সাপোর্ট দিতে তার নিজের ও তার স্ত্রীর একাধিক নাম্বার ব্যবহার করেন বলে দাবি করেন। প্রতি উত্তরে সাপোর্ট দেওয়া শিক্ষার্থীদের পরবর্তী টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে কোন সদুত্তর দেননি তিনি। এক পর্যায়ে অভিযোগ করা ভোক্তভোগীদের মোবাইল নাম্বার চান এবং টাকা ফেরত দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে প্রতিবেদককে সংবাদ প্রচার না করার জন্য অনুরোধ করেন।

উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। ইতিমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

আরও খবর